চার বছরে কন্যা শিশু হাওয়ারা। এই বয়সে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা আর হাসি-আনন্দে মত্ত থাকার কথা তার। কিন্তু হাওয়ারা এখন তার গ্রামের উপহাসের পাত্র। তাই নিজেকে অন্য মানুষের সামনে থেকে লুকিয়ে রাখে এ শিশু মেয়েটি।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদের দক্ষিণ এলাকার ওয়াহিদ হাজিরান গ্রামে থাকেন হাওয়ারার পরিবার। জন্মের পর থেকে বিস্ময়কর এক চর্মরোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। হাওয়ারা যত বড় হতে থাকে তার রোগও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তার শরীরের একটি বড় অংশ এখন সম্পূর্ণ কালো হয়ে আছে।
কিন্তু হাওয়ারার জন্মই যেন আজন্ম পাপ। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে যুদ্ধ-সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরাক। এর মধ্যে ইরাকের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন সময়ে জন্ম নিয়েছে হাওয়ারা।
ইরাকের কোথাও হাওয়ারার এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। এখন তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বিদেশ নিতে হবে। কিন্তু বিধ্বস্ত ইরাকের অসহায় এই পরিবারটির পক্ষে সেটিও এখন সম্ভব নয়।
তাই প্রতিদিন হাওয়ারাকে অন্য মানুষের থেকে লুকিয়ে রাখে তার পরিবার। লম্বা জামা আর হাই কলারের শার্ট পরিয়ে তার এই রোগ ঢেকে রাখতো পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এখন কালো অংশটি গলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাই হাই কলারের জামা দিয়েও আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না।
জন্মের দুই বছর পর্যন্ত হাওয়ারা স্কুলে যেতে পারতো বলে জানিয়েছেন তার মা আলী খাফিফ। বর্তমানে পরিবারটি কন্যাকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যরা হাওয়ারার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে এ বিষয়ে তার মা বলেন, মেয়েকে এখন স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি না। সে স্কুলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এটা এখন তার ভবিষ্যতের জন্য বড় বাধা।
হাওয়ারার বর্তমানে 'স্কিন গ্রাফ্ট' ও 'লেজার সেশান' চিকিৎসা দরকার বলে জানিয়েছেন দেশটির ত্বক বিশেষজ্ঞ আকিল আল খালদি। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে এ চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।
২০০৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের সময় এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর যুদ্ধ আর সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরাক। ২০০৩ সালের আগে প্রায় এক দশক দেশটির ওপর দেয়া অবরোধে ভেঙ্গে যায় অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে ইরাকের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের মুখে।
হাওয়ারার মা বলেন, আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। ডাক্তাররা বলেছে, ইরাকে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। সব ডাক্তারই বলেছে, তাওয়ারাকে কোনো বিদেশি বিশেষজ্ঞর অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে সেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।
হাওয়ার ছোট ভাই আহমাদ বলেন, যখন সে বাসায় থাকে তখন একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন হাওয়ারা বাইরে যায় এবং তাকে কেউ দেখে তখন ওই লোকেরা হাসতে থাকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন