বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়’ লেখা হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের সন্ধান চাইছেন। বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা তুলে ধরে মহাকাশেও দুই দেশের মিত্রতার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে এই কথা বলেন মোদি।
এ সময় আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসায় মাতেন ভারতীয় সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া তার দেশের জন্যও প্রেরণা।
আর এই বক্তব্যেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক, সহযোগিতা ও যোগযোগের ক্ষেত্রে ক্রমেই বাড়ছে বলেও জানান মোদি।
ভারতীয় নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্রে উন্মোচিত হচ্ছে।
‘পবিত্র ভূমিতে’ ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং উপনিবেশ আমলে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের কথাও তুলে ধরে শ্রদ্ধা জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বলেন ঔপনিবেশিক আমলের বিভাজনের রাজনীতি এড়িয়ে দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে।’
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় লেখা হচ্ছে জানিয়ে মোদি বলেন, ‘একটা সময় দুই দেশের মধ্যে স্থল সীমানা এবং সমুদ্র সীমানার মতো সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব মনে হচ্ছি। কিন্তু এখন সড়ক, রেল থেকে শুরু করে আন্তদেশীয় সব ধরনের যোগাযোগ বাড়ছে।’
কলকাতা-খুলনার মধ্যে চালু হওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কথা তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘আমরা এর নাম দিয়েছি বন্ধন’।
বাংলাদেশের উন্নতি প্রশংসা করার মতো উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশ মহাকাশ বিজ্ঞানেও এখন এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে।’
‘ভারত আগে থেকেই স্যাটেলাইটের মালিক। এখন বাংলাদেশও এই দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং ভবিষ্যতে মহাকাশেও দুই দেশের সহযোগিতা বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।’
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাও একসঙ্গে মোকাবেলায় আগ্রহী মোদী। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারত ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে জানিয়ে মোদি জানান, এটি ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।
বাংলাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার ঘোষণার উল্লেখ করে ভারতীয় নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশেও আমরা আগামী বছরের মধ্যে সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য এক।’
ভারত সৌর শক্তির ব্যবহার করতে নতুন জোট করেছে জানিয়ে গত মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথাও তুলে ধরেন মোদি।
গত মাসে বাংলাদেশের ১০০ জন যুবকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘দুই দেশের বিকাশের জন্য আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে দুঢ়প্রতিজ্ঞ।’
উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে বাংলাদেশের সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন ভারতীয় নেতা।
ভারত ও বাংলাদেশ যেভাবে বন্ধুর মতো এগিয়ে চলছে, একে অন্যের বিকাশে সহযোগিতা করছে, তা অন্যের জন্যও উদাহরণ বলে মনে করেন মোদি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের যোদ্ধাদের একসঙ্গে লড়াই করার বিষয়টি তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন উদাহরণ খুব কম যেখানে দুই দেশের সেনারা একে অন্যকে এত সম্মান দিয়েছে।’
‘বাংলাদেশের মানুষ সেই সময় যে যন্ত্রণা পেয়েছেন৷ তা অনুভব করেছেন এপারের বাসিন্দারাও।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান মোদি। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশে যতটুকু সম্মান পান, ততটুকু সম্মানই তিনি ভারতবাসীর কাছেও পান।’
বঙ্গবন্ধুর মতোই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও দুই দেশের সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন মোদি। বলেন, তিনি যতটা ভারতের, ততটাই বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ভারতের প্রেরণা
মোদি তার বক্তব্যে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘বাংলাদেশ সামজিক খাতে যেভাবে উন্নতি করেছে, গরিব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে যে কাজ করেছে, তা ভারতের জন্যও প্রেরণাদায়ক।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। এর জন্য বাংলাদেশ যতটা গর্বিত, ততটাই গর্বিত ভারত।’
উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকারও অঙ্গীকার করেন মোদি। বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা তার দূরদৃষ্টি ও বঙ্গবন্ধুর পরস্পরার প্রতীক। এ ক্ষেত্রে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন মোদি।
বাংলাদেশ ভবন সম্পর্ক আরও জোরদার করবে
সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যোগ দেন মোদি। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। মোদি বলেন, শেখ হাসিনার উপস্থিতি এই সমাবর্তনকে পূর্ণতা দিয়েছে।
দুই দিনের সফরে শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরের একটি উপলক্ষ এই সমাবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন। ২০১০ সালে এই ভবন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয় দুই দেশে। আর বিশ্বভারতী দেয় জমি, বাংলাদেশ সরকার দেয় অর্থ।
এই ভবনে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ওপর নানা বই, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা নানা সামগ্রী, বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপস্থাপনা রয়েছে। দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে এই উদ্যোগ অবদান রাখতে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি বলেন নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়।
মোদি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের অতীত, বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরেন।
গুজরাটি ভাষাভাষি মোদি তার বক্তব্য শুরু করেন বাংলায়। বলেন, ‘বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন সৌভাগ্যজনক। অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দ অনুভব করলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাজিকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। কবিগুরু শান্তিনিকেতনে আসায় ওনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন