মাথাটা প্রায় আলাদা হয়ে গেছে বললেই চলে, একটু করে লেগে আছে মাত্র। ছোট সে মাথাটি হেলে আছে ডান দিকে নিথর-নিস্তব্ধ। যার কথা বলা হচ্ছে সে শিশুটির বয়স ছিল মাত্র এক মাস। মায়ের ভাষ্য, দোলনা থেকে নিচে বঁটির ওপর পড়ে মেয়ের গলা কেটে গেছে। কিন্তু প্রতিবেশীদের দাবি এটা পরিকল্পিত হত্যা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কেতু গ্রামের আরনায় এ ঘটনা ঘটে। মাসখানেকের এ শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার কারণেই গলা কেটে শিশুটিকে খুন করেছেন বাবা-মা।
পুলিশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ২৩ মে, বুধবার ভোর ৫টা নাগাদ মেয়েকে দুধ খাইয়ে শৌচাগারে গিয়েছিলেন মা রিজিয়া বিবি। ২৯ দিনের শিশুটি তখন দোলনায় শুয়ে ছিল। কিন্তু তিনি ফিরে এসে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। মেয়ের গলা কাটা। এর পরেই প্রতিবেশীদের ডেকে ঘটনার কথা জানান তিনি। কিন্তু প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মেয়েকে খুন করেছেন বাবা-মা। মেয়ে হওয়ার কারণেই ওই শিশুটিকে খুন হতে হয়েছে বলে তাদের দাবি।
প্রতিবেশীদের একটি অংশ জানান, কেতু গ্রামের আরনায় মা, স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন আফাজ শেখ। স্ত্রীর বয়স ২৩। মাসখানেক আগে তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। আফাজ তার কর্মক্ষেত্র মহারাষ্ট্র থেকে বাড়ি এলে মেয়ে হওয়া নিয়ে ঘরে অশান্তি দেখা দেয়। আফাজ আগে থেকেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন।
ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দাবি, এদিন আফাজ বাড়িতে ছিলেন না, খেতমজুরির কাজে গিয়েছিলেন বীরভূমের লাভপুরে।
কেতু গ্রাম থানার কর্মকর্তা বাসুদেব সরকার জানান, ইতোমধ্যে শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার ঘাড়ের পেছনে গভীর ক্ষত ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি বঁটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এটি নিছকই দুর্ঘটনা না কোনো আক্রোশের বশেই শিশুটিকে খুন করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সদ্যোজাত কন্যাসন্তানদের অহরহ জঞ্জালের স্তূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতেই এ দেশে মেয়েদের অবস্থানটা স্পষ্ট হয়ে যায়।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন