পাঁচ দিন আগে বিয়ে হয়েছে। দু'দিন আগে ছিল রিসিপশন। দুই অনুষ্ঠান মিলিয়ে প্রচুর উপহার পেয়েছিলেন নবদম্পতি।
কিন্তু সেই উপহার খুলতে গিয়েই ঘরের ভেতরে বিস্ফোরণ। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন দম্পতি। সঙ্গে বরের দাদিও।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান ওই যুবকসহ তার দাদি। গুরুতর জখম নববধূ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের উড়িশ্যার বোলানগির জেলায় এ ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় দুই মাস পর এসে সেই ঘটনায় পুঞ্জিলাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় পুলিশ।
বরের মায়ের প্রতি শত্রুতা থেকেই পুঞ্জিলাল মেহর একাজ করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের স্থানীয় ক্রাইম ব্রাঞ্চের আইজি বলেন, সৌম্যর (বরের) মায়ের ওপর প্রতিহিংসা থেকেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে পুঞ্জিলাল। পেশায় অধ্যাপক পুঞ্জিলাল যে কলেজের কর্মরত সেই কলেজেরই অধ্যক্ষ নিহত সৌম্যর মা।
গত বছর পুঞ্জিলালকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সৌম্যর মাকে অধ্যক্ষ করা হয়। এর পরই তার সঙ্গে নানা ভাবে অসহযোগিতা শুরু করেন পুঞ্জিলাল। শেষ দেখে ছাড়বে বলে হুমকিও দেন তিনি।
পুলিশের দাবি, প্রায় ৮ মাস ধরে বোমা তৈরি নিয়ে গবেষণার পর শেষ পর্যন্ত 'সফল' হয় পুঞ্জিলাল। বোমা বানানোর জন্য গত দীপাবলিতে প্রচুর বাজি কেনে পুঞ্জিলাল।
তার পর ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি করে বোমা। সন্দেহ এড়াতে যেদিন তিনি পার্সেলটি ডাকে পাঠান সেদিন কলেজে ক্লাসও করান তিনি।
সিসিটিভিতে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে এক অটোচালককে দিয়ে বাক্সটি ডাকে দেন তিনি।
মৃত সৌম্যর বাবা রবীন্দ্র জানিয়েছেন, 'ও আমার ছেলের বিয়েতে এসেছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে। ২০১৪ সালে আমার স্ত্রী ভাইনসার কলেজে যোগদান করেছিলেন। পুঞ্জিলালের থেকে ১৩ বছর বেশি পেশাদারি অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার স্ত্রীর।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে সব থেকে অভিজ্ঞ লেকচারারই অধ্যক্ষ হন। যদিও নিজের পদ ছাড়তে রাজি ছিলেন না পুঞ্জিলাল। আমার স্ত্রীকে সে নিয়মিত হেনস্থা করতে থাকে। তার বিরুদ্ধে দেরিতে কলেজে যাওয়া ও ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগ করেন। এমনকী আমার স্ত্রীকে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করে সরকারি চিঠি আসার পর ৩ মাস পদ ছাড়তে চাননি পুঞ্জিলাল। শেষে পদ ছাড়তে বাধ্য হলেও কলেজের কর্মীদের আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষেপাতে শুরু করেন তিনি।
ঘটনার দিন বিয়ের ব্যস্ততার কারণে উপহারগুলো আর দেখে ওঠা হয়নি। রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষে উপহারগুলো বাড়িতে এনে রেখে দিয়েছিলেন।
আত্মীয়স্বজন চলে গেলে উপহারগুলো দেখবেন বলে ঠিকও করে রেখেছিলেন। ওই দিন উপহারগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন স্বামী-স্ত্রী মিলে। উপহারগুলো দেখার জন্য নাতি ও নতুন নাত-বউয়ের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন দাদি। উপহারগুলোর মধ্যে রাখা একটি বাক্স খুলতেই জোরালো বিস্ফোরণ হয়। তিনজনেই গুরুতর জখম হন।
বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে দেখেন ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মেঝেতে পড়ে রয়েছেন তিনজন। তাদের উদ্ধার করে রৌরকেলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর যুবক মারা যান।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন