কাঠুয়ার আসিফা ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দাখিলের ১২ দিন পর জম্মু-কাশ্মিরের পুলিশকে একটি বিবৃতি দিতে হয়েছে। এতে গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে, ৮ বছরের আসিফাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পুলিশকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে কারণ সামাজিক মাধ্যম ও কয়েকটি মূলধারার সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে, আসিফাকে ধর্ষণ করা হয়নি। কিন্তু পুলিশি নথিপত্র যাচাই করার পর স্পষ্ট যে, আসিফাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ভুয়া খবরটির প্রচার শুরু হয় ভারতের শীর্ষস্থানীয় হিন্দি ভাষার দৈনিক পত্রিকা জাগরণ-এর মধ্য দিয়ে। ২০ এপ্রিল পত্রিকাটি প্রথম পাতায় একটি খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে দাবি করা হয়, আসিফাকে ধর্ষণ করা হয়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে শুধু আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জাগরণ-এর খবরটি সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন বিজেপি সংশ্লিষ্টরা এই খবরকে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে থাকে।
‘আই সাপোর্ট নরেন্দ্র মোদি’ নামের ফেসবুক পেজের ফলোয়ার সংখ্যা দেড় কোটি। এই পেজে খবরটি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ‘হিন্দুদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ণ করার ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হয়েছে’। পোস্ট করার খবরটি শেয়ার হয় ৩৪ হাজার বার। পেজটি পরিচালনা করেন বিকাশ পাণ্ডে নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে টুইটারে বিজেপির স্বেচ্ছাসেবী বলে দাবি করেছেন।
শেষ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মির পুলিশ একটি বিবৃতি প্রকাশে বাধ্য হয়। এতে পুলিশ নিশ্চিত করে যে, আসিফা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল।
পুলিশের সরকারি নথির সঙ্গেও জাগরণের দাবি ছিল সাংঘর্ষিক। ১৭ জানুয়ারি কাঠুয়া জেলা হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের নৃশংসতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ৮ মার্চ চিকিৎসকরা পুলিশের কাছে লিখেছিলেন, আসিফার গোপনাঙ্গে যেসব আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তা যে কোনও রূপের যৌন হামলার কারণে হতে পারে।
দৈনিক জাগরণ দাবি করে, আসিফার দুটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এনডিটিভিকে জম্মুর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্র একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনটি ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করতে আরেকটি সরকারি নথির কথা তুলে ধরা হয়। এতে ৩০ জানুয়ারি শ্রীনগরের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ৭২ ঘণ্টা পর আসিফার লাশ উদ্ধার করায় ধর্ষণের চিহ্ণ পাওয়া সম্ভব নয়।
এনডিটিভির পক্ষ থেকে দৈনিক জাগরণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা খবরটি পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে দুটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ হাজির করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা চুল শিশুটি ও অভিযুক্তের সঙ্গে মিলেছে এবং তা প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ভুয়া খবর শুধু যে তদন্তকে ব্যহত করবে তা নয়, বরং তা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করবে।
উল্লেখ্য, কাঠুয়া অঞ্চলের যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর মেয়ে ছিল ৮ বছরের ছোট্ট আসিফা। কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চরানোর সময় অপহরণ করা হয় তাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সানজি রাম তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে আশফিয়া নামের ওই শিশুকে অপহরণের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর মন্দিরে আটকে রেখে তিন দিন ধরে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়ান ক্ষমতাসীন বিজেপির স্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন