কাশ্মীরের উপজাতিরা আধুনিক ভারতের কোনো সুযোগ সুবিধাই পায় না। পাহাড়ে ছাগল, গরু আর ঘোড়া চরিয়েই জীবিকা চলে তাদের। তারা সাধারনত খবরেই আড়ালেই থাকে, কিন্তু সম্প্রতি ৮ বছর বয়সী এক কিশোরী মেয়ে আসিফা বানুর ধর্ষণের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের সমস্যাগুলো সামনে আসে।
ওই অঞ্চলের মুসলিমরা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা রোজানায় হিন্দুদের দ্বারা গণধর্ষণ ও নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তার অভাবে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। খবর এএফপি
৭৪ বছর বয়সি গোলাম মোহাম্মাদ রাস্তার পাশের ইউক্যালিপ্টাস গাছের নিচে অস্থায়ী তাবুতে বসবার করছেন। তিনি বলেন, হিন্দুরা চায় না আমরা এই এলাকায় থাকি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের মনে অনেক শত্রুতা।
তিনি আরো বলেন, আমি ধর্ষণের ঘটনাটি রেডিওতে শুনেই এলাকা ছেড়েছি। এখন রাস্তার পাশের তাবুতে আছি, সাথে আমার মেয়েও আছে। চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না, সবসময় ভয়ে থাকি, মনে হয় হয়ত কেউ আসছে।
পুলিশ বলছে, সম্প্রতি আসিফাকে মাদকাসক্ত করে আটজন মিলে পাঁচদিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে মাথায় পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; যা বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
ওই ক্যাম্পেরই এক বাসিন্দা রেসনা বিবি তার দশ বছর বয়সী নাতনির দিকে দেখিয়ে বললেন, আসিফা এত বড়ই ছিল।
জম্মু-কাশ্মীর একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্য হলেও জম্মু এলাকায় হিন্দু বেশি। মুসলিমরা সাধারণত অতিরিক্ত শীত থেকে বাঁচতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এই এলাকায় আসে। কিন্তু স্থানীয় হিন্দুদের তোপের মুখে পড়তে হয়। যদিও ঐসব ভূমির মালিকানা নির্দিষ্ট কোনো হিন্দুর নয়।
মোহাম্মদ বলেন, জম্মু থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। আমরা জম্মু ছেড়েছি তিন দিন পূর্বে। আরো দুই সপ্তাহ লাগবে মূল শহর শ্রীনগরে পৌঁছতে।
রেসনা বিবি বলেন এটা কোনো জীবন নয়, আমি চাই আমার সন্তান লেখাপড়া করুক।
আরো পড়ুন . . . .
কলকাতা: ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আট বছরের মুসলিম শিশু আসিফা বানুকে গণধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে কলকাতার মানুষ।
শুক্রবার সারা দিন কলকাতার শিক্ষার্থী ও ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা শনিবার রাতভর বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছেন।
শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, আশুতোষ কলেজ, চারুচন্দ্র কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আসিফা বানু ধর্ষণ-হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। শ্যামবাজার, মানিকতলা, বাগবাজার, টালিগঞ্জ, কসবা ও যাদবপুরে সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিলে যোগ দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিবাদে শামিল হয় একাধিক রাজনৈতিক দলও।
আসিফা বানু হত্যার প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এসইউসির ছাত্র-যুব-নারী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তুলে দিতে গেলে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন এসইউসি কর্মীরা।
শনিবার আসিফা ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালিত হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতি কর্মীদের একাংশ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ময়দান এলাকার আম্বেদকরের ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল করে নন্দন চত্বরে যাবেন।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার রাসানা গ্রামে আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন