আগামী মে মাসে তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। আর এ ঘোষণায় যার পর নেই খুশি হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে, ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস ও পিএলও।
গতকাল শুক্রবার মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আগামী মে মাসে ইসরাইলের তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে। এ ঘোষণার পর নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরাইলি জনগণের জন্য একটি মহান দিন।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাস হিব্রু ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ডিসেম্বরের ঘোষণাকে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলের স্বাধীনতা দিবসে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে। এর ফলে ইসরাইলের ৭০তম স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালিত হবে। নেতৃত্ব ও বন্ধুত্বের জন্য ট্রাম্প আপনাকে ধন্যবাদ।
এদিকে, দূতাবাস স্থানান্তরের মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা পিএলও।
হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানু শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গোটা অঞ্চল ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
তিনি আরো বলেন, মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা হলেও বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবেই থেকে যাবে; দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হতে পারবে না।
হামাসের মুখপাত্র তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘটনাকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা বা পিএলও’র নির্বাহী কমিটির সচিব সায়েব এরিকাত মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে প্রচণ্ড আঘাত হানবে।
তিনি বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পদ এবং এটি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী; ইসরাইলের নয়।
মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বের কঠোর বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে, আগামী মে মাসে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে স্থানান্তর করা হবে।
গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর তিনি ঘোষণা করেন, তেল আবিব থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া হবে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয় এবং আমেরিকা তাতে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওআইসি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে জরুরি বৈঠক করে এবং জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে।
গত ৬ ডিসেম্বর ট্রাম্প যখন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন তখন ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্ব এবং অন্যান্য দেশেও বিক্ষোভ হয়। ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে কয়েকজন ফিলিস্তিনি মারাও যায়।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা এবং বিশ্বনেতারা সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের এই একতরফা সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। কিন্তু ট্রাম্প বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন