শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনকারীদের যৌন তাড়না কমাতে তাদের নপুংসক করার আইন করতে যাচ্ছে তুরস্ক। তুর্কি সরকার সংসদে একটি নতুন আইন আনছে, যার বলে বিচারকরা শিশু নিপীড়নকারীদের কেমিক্যাল ক্যাস্ট্রেশন, অর্থাৎ রাসায়নিক নপুংসককরণের নির্দেশ দিতে পারবেন৷
আইনমন্ত্রী আবদুলহামিত গুল বলেন, যে ব্যক্তিদের শিশুদের যৌন নিপীড়নের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাদের যৌন তাড়না কমানো বা নির্মূল করার জন্য এই পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে৷ আইনের খসড়াটি কয়েক দিনের মধ্যেই সংসদ সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করা হবে৷
১০ বছর আগের তুলনায় ২০১৬ সালে তুরস্কের বিভিন্ন আদালতে চার গুণেরও বেশি শিশু যৌন নিপীড়নের মামলা ওঠে৷ ২০০৬ সালে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ২১ হাজার ১৮৯টি মামলা আদালতে ওঠে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ মামলায় অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়৷
রাসায়নিক নপুংসককরণের যেসব ‘অ্যানাফ্রোডিজিয়্যাক' বা কামোদ্দীপনা হ্রাস করার ঔষধি প্রয়োগ করা হয়, সেগুলো কামেচ্ছা ও যৌন সম্ভোগের ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমাতে পারে বটে, কিন্তু তার ফলে যৌন কামনা স্থায়ী বা পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়ে যায় না৷ ফলে প্রতি তিন মাস অন্তর ওষুধ খেতে হয় বা ইনজেকশন নিতে হয়৷
ব্রিটিশ সংসদে যৌন হয়রানির মারাত্মক চিত্র
ব্রিটিশ সংসদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে তাদের এক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে। সংসদের লোকদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটিই এ প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংসদে কাজ করেন, এমন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে আন্তঃদলীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সংসদে নিপীড়নের ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন।
ব্রিটিশ সংসদ হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রে লিডসম বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু যৌন হয়রানি নয়, সংসদের ৩৯ শতাংশ কর্মী কর্মস্থলে নির্যাতন ও হয়রানির কথা বলেছেন। এসব কর্মীর মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী ও ৩৫ শতাংশ পুরুষ।
গত বছর ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন অশোভন যৌন আচরণ করার জন্য পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া পার্লামেন্ট সদস্য স্টেফেন ক্রাব, ক্রিস পিনসার, ড্যানিয়েল কাসজিনস্কিকেও সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন যৌন আচরণের অভিযোগ ওঠে। জাতীয় সংসদ যেখানে মানুষের কল্যাণে আইন প্রণয়ন করা হয় সেখানেই যদি এ অবস্থা বিরাজ করে তাহলে সারা দেশে যৌন হয়রানির অবস্থা যে আরও ভয়াবহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
জাতিসঙ্ঘেও যৌন হয়রানি!
জাতিসঙ্ঘের সব প্রতিষ্ঠানেই যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব জুড়ে সংস্থাটির আঞ্চলিক অফিসগুলোতে অহরহই এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তারা একদমই নিশ্চুপ। এমনকি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে অভিযোগকারীদের। ভিন্ন দপ্তরের তিন নারী জানিয়েছেন, তারা যৌন হয়রানি বা যৌন হামলার বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বা চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, যৌন হয়রানির ব্যাপারে সংস্থাটিতে এক ধরনের নীরবতার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। এর অভিযোগ প্রক্রিয়াও ত্রুটিপূর্ণ। অভিযোগ করলে ভুক্তভোগীরাই উল্টো বিপদে পড়েন।চাকরি হারানোর ভয় কিংবা অভিযোগ করে কিছুই হবে না সেই হতাশা থেকে অনেক নির্যাতিতাই এ ব্যাপারে এগোতে চান না। আপনি যদি অভিযোগ করেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ার একেবারেই শেষ। বিশেষ করে আপনি যদি পরামর্শক হন। এটা অনেকটা অব্যক্ত ব্যাপার।
১০টিরও বেশি দেশে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাক্ষাৎকার দেয়া নারীদের মধ্যে ১৫ জন জানিয়েছেন যে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে তারা যৌন হয়রানির বা হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের এ অভিযোগের মধ্যে কটূক্তি থেকে শুরু করে ধর্ষণও রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৭ নারী তাদের সঙ্গে যা ঘটেছে সে ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন