: ধারাবাহিকভাবে মুসলিম ও কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের কাউন্সিল সদস্য টম হ্যারিসন।
সম্প্রতি মার্কিন স্কুলগুলোতে ইসলাম নিষিদ্ধের জন্য একটি ভিডিও পোস্ট করেন টম হ্যারিসন নামে এই সদস্য। এরপর থেকেই তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন শহরটির মেয়র হ্যারি লা’রসিলিয়ারে।
এতে সাড়া না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানাতে সোমবার কাউন্সিল ভোটের আয়োজন করা হয়। এর পক্ষে ৭টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে ভোট দেন কেবল হ্যারিসন নিজে।
‘জয়েন্ড হ্যান্ডস অ্যাক্রস আমেরিকা ফর ট্রাম্প’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে গত মঙ্গলবার ভিডিওটি হ্যারিসন তার পেজে শেয়ার করেন।
ভিডিওটিতে স্কুলে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের প্রার্থনা করার কয়েকটি দৃশ্য এবং হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ছবির শিরোনামে লেখা রয়েছে ‘যদি আপনি মনে করেন আমেরিকান স্কুলে ট্রাম্পের ইসলাম নিষিদ্ধ উচিত তাহলে এটি শেয়ার করুন’।
ভিডিওটি নিয়ে তুমুল বিতর্কের পর শহরটির মেয়র হ্যারি লা’রসিলিয়ার তাকে পদত্যাগরে আহ্বান জানান। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যার দিকে ভিডিওটি তিনি তার ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে ফেলেন।
কাউন্সিলে ভোটের পর সোমবার বিকালে এক বিবৃতিতে মেয়র হ্যারি লা’রসিলিয়ার বলেন, ‘আমাদের বহুবিচিত্র সম্প্রদায়ের সেবা করার জন্য একজন কাউন্সিল সদস্য হিসেবে হ্যারিসনের আচরণ অশোভন। আমি মনে করি তার এই ফেসবুক পোস্ট চরম ঘৃণিত এবং বিশ্বাস করি এটি আমাদের শহরের জন্য একটি কলঙ্ক এবং এটি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
এই বির্তকে হ্যারিসন পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন বলে হ্যারি লা’রসিলিয়ারে জানান।
হ্যারিসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভৎসনা জানাতে কাউন্সিলের ভোটে সাতজন সমর্থন জানান। একমাত্র বিরোধিতা করেন হ্যারিসন নিজে।
মেয়র বলেন, ‘ভোটে হ্যারিসন নিজেই ছিলেন একমাত্র ভিন্নমত পোষণকারী।’
মেয়র বলেন, হরিসনের এই ধরনের আরো আক্রমণাত্মক পোস্টের বিষয়ে তারা অবগত হয়েছেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চলতি সপ্তাহে একটি বিশেষ কাউন্সিল মিটিং ডাকা হয়েছে।
হ্যারিসনের বিতর্কিত পোস্টগুলোর একটি বলা হয়েছে, ‘১৯ শতকে সমস্ত দাসের মালিক ছিলেন ডেমোক্রেটরা। আর ২১ শতকে সমস্ত দাসের মালিক হচ্ছেন মুসলমানরা এবং তাদের মিত্র হচ্ছেন ডেমোক্রেটরা।’
রবিবারের কাউন্সিল মিটিংয়ের সময় হ্যারিসন বলেন, এই ঘটনায় যদিও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু তিনি পদত্যাগ করবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি প্লানোর নাগরিকদের আশ্বাস দিতে চাই, আমি বিদেশি বিদ্বেষি নয়। আমি একজন গোঁড়া নই। আমি একজন বর্ণবাদী নই। একজন নির্বাচিত ব্যক্তি হিসেবে আমি বলতে চাই যে আমি প্লানোর প্রত্যেকের জন্য কাজ করবো।’
চার বছরের মেয়াদের জন্য ২০১৫ সালে হ্যারিসন শহরের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
ধর্মীয় শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা, প্রার্থনা বা মুসলিম ছাত্রদের নিষিদ্ধ করা, স্কুলগুলো থেকে ইসলাম নিষিদ্ধের অর্থ কি- সে সম্পর্কে ভিডিওটিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
সুজানে নামে একজন নারী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি একজন মা। আমি প্লানো শহরের একজন বাসিন্দা। আমি একজন মুসলিমও। তাই পোস্টের ধরনটি আমাকে অনেক উপায়ে আঘাত করার মতো।’
তিনি বলেন, বুধবার সকালে তার একজন বন্ধু তাকে পোস্টটির একটি স্ক্রিনশট পাঠায়। এটি তাকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে। পরে তিনি পোস্টটি সম্পর্কে শহরটির মেয়রকে ইমেইল করেন এবং তারপর মেয়রের কাছ থেকে সরাসরি শোনার জন্য সিটি হলে যান।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন