ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ইসরাইল আলোচনার সব ধরনের পথ রুদ্ধ করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ইসরাইল এমনভবে আচারণ করছে যেন তারা আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্দ্ধে।
চলতি বছরের মাঝামাঝির সময়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট।
আব্বাস বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যুর সমাধান করতে হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হওয়া প্রয়োজন।’ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাই সমন্বিত প্রচেষ্টায় আলোচনা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গেল ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দেওয়া মার্কিন সহায়তা বন্ধ করায় ট্রাম্পের ওপর ক্ষিপ্ত ফিলিস্তিনি জনগণ।
এর আগে আব্বাস বলেন, ওয়াশিংটন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তাই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতা আর গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা আমরা মানবো না: মাহমুদ আব্বাস
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, এরপর ফিলিস্তিনিরা আর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শান্তি প্রস্তাব মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে এই শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অসততার পরিচয় দিয়েছে, সেটা প্রমাণিত।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে দেয়া স্বীকৃতিকে প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়ে মাত্র গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এক প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাশ হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলসহ মাত্র নটি দেশ এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় বহু দশক ধরেই প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করছে যা ২০১৮ সালে দুই পক্ষের কাছে পেশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইসরাইলের পক্ষে কট্টর অবস্থান নিয়েছে এবং জেরুসালেমকে দেশটির রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই এই দেশটির মধ্যস্থতা আর মেনে নিতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে দেয়া স্বীকৃতিকে প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এক প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাশ হয়।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এনিয়ে ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত কূটনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ার পর শুক্রবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শান্তি আলোচনায় তারা আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা মেনে নেবেন না।
প্যারিসে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রর সঙ্গে এক সাক্ষাতের পর তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্র আর এই শান্তি প্রক্রিয়ায় কোন সৎ মধ্যস্থতাকারী নয়, সেটাই তিনি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শান্তি প্রস্তাব আমরা আর মানবো না, কারণ তারা পক্ষপাতদুষ্ট এবং তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
যেসব দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টারও নিন্দা করেন তিনি।
তিনি বলেন, কোনো দেশকে অর্থ দিয়ে কিনে জোর করে যে কোনো সমাধান চাপিয়ে দেয়া যায় না, সেটা থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবে বলে আমি আশা করি।
জাতিসংঘের ভোটে কূটনৈতিক পরাজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, এই বিশ্বসংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বিশাল অংকের চাঁদা দেয়।
তিনি এমন হুমকিও দেন যেসব দেশ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রকে এভাবে অশ্রদ্ধা করেছে, ভবিষ্যতে সেসব দেশের বেলায় এই ঘটনার কথা মনে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন