নিজ দেশে মোবাইল ফোনে অর্থ স্থানান্তর পরিষেবায় সাফল্য পাওয়ার পর এবার সাইফুল খন্দকার বিশ্ব জুড়ে অর্থ স্থানান্তর পরিষেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চান। এই বাংলাদেশি-আমেরিকান তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ পৌঁছে দিতে চান সবার কাছে। বহু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা সাইফুল খন্দকার আশা প্রকাশ করেছেন, তার ফামাক্যাশ নামের অ্যাপটি ব্যবহার করে যে কেউ, যেকোনও সময় যেকোনও স্থানে অর্থ পাঠাতে ও পেতে পারবেন। তার ভাষায়, ‘ফামাক্যাশ আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর পরিষেবায় নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হতে চায়।’
খন্দকারের বড় সাফল্য বিকাশ। বিকাশ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে বিকাশের প্রভাব লক্ষণীয়। কিন্তু বিকাশ আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর সুবিধা দিতে পারে না। আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এখনও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভরসা করে থাকতে হয়। ফামাক্যাশ আসবে সেই ঘাটতি পূরণে। এটি হবে অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা। ব্যবহারকারীরা কয়েক স্পর্শেই (টাচ) অর্থ স্থানান্তর সম্পন্ন করতে পারবেন। ফোনের পাশাপাশি কম্পিউটারেও ব্যবহার করা যাবে ফামাক্যাশ। ব্যবহারকারীরা পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১০ হাজার কেন্দ্র থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
ফামাক্যাশের প্রতিষ্ঠাতা জানান, প্রতিটি লেনদেনের জন্য ২৪৩ টাকা (৩ ডলার) ফি রাখা হবে। প্রতি গ্রাহকের জন্য মাসে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা (১০,০০০ হাজার ডলার) স্থানান্তরের সুযোগ থাকবে ফামাক্যাশ অ্যাপে। ফামাক্যাশ দিয়ে ব্যবহারকারীরা উৎসবের সময়ে আপনজনদের কাছে গিফট কার্ড পাঠাতে পারবে, যা বাংলাদেশের দোকানে ব্যবহার করা যাবে। খন্দকার বলেন, ‘আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের তাদের পরিবারের আরও কাছে নিয়ে যেতে পারবো।’
পাবনার স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল খন্দকার ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন উচ্চতর শিক্ষার জন্য। ‘কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমের’ ওপর স্নাতক সম্পন্ন করার পর খন্দকার ‘টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টে’ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ‘অর্গানাইজেশনাল লিডারশিপের’ ওপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।
৯০-এর দশকে ভারতে ফুলে ফেঁপে ওঠা আউটসোর্সিং দেখে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় তাদেরকে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তার লক্ষ্য বাংলাদেশেও সেই স্টার্টআপ সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার যার বলে বলীয়ান যুক্তরাষ্ট্র আজ এতো সফল। ‘আমরা উন্নতি করছি কিন্তু আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে’, জানান তিনি।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে অনীহার সংস্কৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিত্তশালী বাংলাদেশিরা খাবারের হোটেলের মত প্রথাগত ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করেন। কিন্তু যখনই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার প্রশ্ন আসে তখনই তারা গভীর সন্দেহে পড়ে যান। এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।
কাগজের মুদ্রাবিহীন ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়নেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিহিত, মনে করেন এই সফল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এরকম একটি জাতীয় পরিষেবা শুরু করা যায় কী না সে বিষয়ে আলাপ করতে তিনি ঢাকায় যাবেন। সাইফুল খন্দকার বলেছেন, ‘একটা বড় সংখ্যার মানুষ প্রযুক্তিগত এই সেবা সম্পর্কে জানে না। আমি আশা করি ফামাক্যাশ তাদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
খন্দকার জানান, তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই ৫০টি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে। বাকি দেশগুলোর সঙ্গেও চুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটি ভেনচার ক্যাপিটাল গ্রুপ ফামাক্যাশে প্রায় ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা (৫,০০,০০০ ডলার) বিনিয়োগ করেছে। তিনি আশা করেন, আগামী তিন থেকে ৪ বছরের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে। ‘যদি তা হয়ে যায় তাহলে আমরাই হবো এনওয়াইএসইতে নিবন্ধিত প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রতিষ্ঠান’, আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাইফুল খন্দকার। ফামাক্যাশ উন্মুক্ত হতে পারে মাস তিনেকের মধ্যেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন