তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সিরিয়ার আফরিনে তুর্কি সেনা অভিযানের মোকাবেলায় দেশটির উত্তরাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের সহযোগিতা দেয়ার বিরুদ্ধে বাশার আসাদ সরকারকে হুমকি দিয়েছেন।
তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক টেলিফোন সংলাপে বলেছেন, তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ে সিরিয়া যদি কুর্দিদের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় উপনীত হয় তাহলে দামেস্ককে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এর আগে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সিরিয়ার আসাদ সরকারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ার সরকারি সেনারা যদি আফরিন শহরে সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য প্রবেশ করে তাহলে তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে; কিন্তু তারা যদি কুর্দিদের সহায়তার জন্য সেখানে আসে তাহলে তুরস্ক এর বিরোধিতা করবে।
সিরিয় সীমান্তে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার অজুহাত দেখিয়ে তুর্কি সেনাবাহিনী চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে সিরিয়ার আফরিন শহরে মার্কিন-মদদপুষ্ট কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু সিরিয়ার বাশার আসাদ সরকার তুর্কি এই পদক্ষেপকে সিরিয়ার ওপর প্রকাশ্য আগ্রাসন বলে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
আমেরিকা ও তার সহযোগী কয়েকটি রাজতান্ত্রিক আরব সরকার এবং দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশাপাশি তুর্কি সরকারও ইসরাইলি আধিপত্যবাদের কঠোর বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে আরব এই দেশটির ওপর লেলিয়ে দিয়েছিল সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গ্রুপসহ ধর্মান্ধ ওয়াহাবি-তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে। কিন্তু ইরান, হিজবুল্লাহ ও রাশিয়ার সহযোগিতায় সিরিয়ার সরকারি ও গণ-বাহিনী এই গোষ্ঠীগুলোকে পরাজিত করে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।
এ অবস্থায় মার্কিন সরকার কুর্দি গেরিলা গোষ্ঠী ওয়াইপিজি-কে মদদ দিয়ে সিরিয়াকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠায় প্রমাদ গুণেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম প্রধান মদদদাতা এরদোগান। কারণ সিরিয়ার কুর্দিরা স্ব-শাসন বা বিচ্ছিন্নতার দিকে এগুতে থাকলে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলেও জোরদার হবে ভাঙ্গন বা বিচ্ছিন্নতার তৎপরতা। এ অবস্থায় এরদোগান শুরু করেন সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত আফরিন অঞ্চলের ওপর সামরিক অভিযান।
সম্প্রতি ওয়াইপিজি গেরিলারা তুর্কি হামলার মোকাবেলায় সিরিয়ার আসাদ সরকারের সহায়তা চাওয়ায় সেখানে সিরিয় সরকারি সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একটি বৈধ সরকার হিসেবে আসাদ সরকার সিরিয়ার যে কোনো অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের অধিকার রাখেন। তাই এ ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এরদোগানের হুমকিকে অবৈধ ও অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে আসাদ সরকার যদি বাইরের হুমকি ও হামলার শিকার নিজ জনগণকে রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেন তাহলে তা হবে এই সরকারের জন্য বড় ধরনের অযোগ্যতার নিদর্শন।
নিজ দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়নে অভ্যস্ত এরদোগান সিরিয়ার বিরুদ্ধে যে হুমকি দিয়েছেন তাকে কেউ কেউ রাশিয়ার বিরুদ্ধেও পরোক্ষ হুমকি বলে মনে করছেন। তুরস্কের ওসমানিয় কর্তৃত্ব বা পুরনো দাপট ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী এরদোগানের এই হুমকি আঙ্কারা-ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক যোগাযোগ ও গোপন কোনো আঁতাতেরও ফল হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
সিরিয়ার সরকার নিজ জাতির অধিকারকে উপেক্ষা করুক ও অবজ্ঞা করুক এটাই- এরদোগানের হুমকিতে ফুটে উঠেছে। এরদোগান যেমন নিজ দেশে কুর্দিদের ওপর দমন নীতি জোরদারের হোতা, তেমনি আসাদ সরকারও সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে একই আচরণ করুন –এটাই তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা। আর এ জন্যই তিনি এ বিষয়ে সরাসরি সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে কথা না বলে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে! #
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন