পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে কিংবা মহাকাশে প্রাণের সন্ধান পেলে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে মানুষের মধ্যে? বিষয়টি নিয়ে গবেষণা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সত্য প্রকাশ পেলে মানুষের ভেতর আতঙ্ক দেখা দেবে, নাকি স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নেয়া হবে এমন বিতর্ক খোদ বিজ্ঞানীদের মধ্যেই রয়েছে। সম্প্রতি এমন বিতর্ককে ঘিরেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন একদল বিজ্ঞানী।
যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, এলিয়েনের প্রমাণ মিললে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, আতঙ্কের চাইতে সাধুবাদ মূলক মনোভাবই দেখা যাবে! তাদের মতে, হলিউডের নির্মিত কল্প-বিজ্ঞান নির্ভর ছবি দেখে মানুষ অনেকটাই প্রভাবিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন হবে।
সম্প্রতি টেক্সাসের অস্টিনে এএএএস (American Association for the Advancement of Science)’এ এটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, হলিউডে নির্মিত ইনডিপেনডেন্ট ডে কিংবা এলিয়েন দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক! তবে বাস্তবে তা নাও ঘটতে পারে।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, মহাজাগতিক প্রাণের সত্যতা মিললেও তা ছবির মতো হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। গবেষণাপত্রে একাধিক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, মহাকাশের প্রথম প্রাণীর দেখা মিললেও তা হবে ক্ষুদ্রাকৃতির। অনেকটা কীটাণু কিংবা জীবাণুর মতো।
তবে সান দিয়েগো’র সাংবাদিক, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক এবং মহাকাশ গবেষক রামিন শিকবা’র মতো অনেকেই দাবি করে আসছেন, মহাকাশের কোনো আবিস্কৃত জীবাণু’ও যদি পৃথিবীতে পৌঁছায় তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। হয়তো বা এমন জীবাণু’র কারণে মানব সভ্যতাই বিলীন হতে পারে।
মার্কিন স্নায়ু বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার কোচ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী গে কনসোলম্যাঙ্গো এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক চিত্রকর এরোন গ্রোন্সটাল বলছেন, মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিলেও হয়তো এসব জীব আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গবেষণা দলে থাকা অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মাইকেল ভারনাম ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেন, জীবাণুর সন্ধানের মাধ্যমে মহাকাশে প্রাণের দেখা পেলেও ওটাই যে চূড়ান্ত তা বলা ঠিক হবে না। কেননা মহাকাশে আরও অনেক ধরনের প্রাণীর দেখাই মিলতে পারে। যার সঙ্গে একমত জং ইউল কুন, হান্নাহ বেরকোভিচি এবং ক্যাটিজা চুনিংহামের মতো বিজ্ঞানীরাও।
গবেষণাপত্রে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ ছাড়াও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র একটি বিবৃতিও স্থান পেয়েছে। সেই সময় নাসা ঘোষণা করেছিল মঙ্গল গ্রহে অতীতে প্রাণ ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তারাই বিতর্ক তৈরি করে।
এছাড়া ১৯৬৭ সালে চৌম্বক আবর্তিত নিউট্রন তারকা পালসার আবিস্কার, যাকে মনে করা হয়েছিল আলোর বিচ্ছুরণের মাধ্যমে তথ্য পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া ১৯৭৭ সালের ওয়াও সংকেত এবং ২০১৭ সালে একাধিক পৃথিবী সদৃশ্য গ্রহের সন্ধান মহাজগতে প্রাণের সম্ভাবনাকে অনেকটাই উজ্জ্বল করে তুলেছে।
এমন অবস্থায় মহাকাশে একাকী বোধ করা পৃথিবীর মানুষ যদি জানতে পারে তাদের এতদিনের ধারণা মিথ্যে তবে কষ্ট হলেও মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলেই গবেষক দল মনে করছেন। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, মানুষকে উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে সেই পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে রেখে সামাল দেয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন