ফ্লোরিডার স্কুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তীব্র সমালোচনা করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।তার ভাষায় গোয়েন্দা সংস্থাটি বেশি সময় ব্যয় করে তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের সাথে রাশিয়ার যোগসূত্র খুঁজতে। এমন টুইটই করেছেন তিনি।
অবশ্য এফবিআই ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে যে ফ্লোরিডার সন্দেহভাজন হামলাকারী নিকোলাস ক্রুজ সম্পর্কে তথ্য পেয়েও তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি তারা।
পার্কল্যান্ডের ওই স্কুলে ১৭ জনের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ২০১২ সালের পর স্কুলে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার পর আবারো আলোচনায় এসেছে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়টি। এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় ন্যাশনাল রাইফেলস এসোসিয়েশনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়ায় সমালোচনা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও।
টুইটে তিনি বলেছেন "খুবই দুঃখজনক যে এফবিআই সব ধরনের সতর্কবার্তা মিস করেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়"।
এ সপ্তাহের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার জন্য ১৩ রাশিয়ানের ওপর অভিযোগ এনেছে এফবিআই।
তিনটি রাশিয়ান কোম্পানিও রয়েছেন এ তালিকায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এ ধরনের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ওদিকে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনা ওঠার পর উল্টো ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করে মিস্টার ট্রাম্প বলেছেন হাউস ও সিনেট উভয়কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন ছিল তখন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে এখন কথা বলছে ডেমোক্র্যাটরা।
মার্কিন তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) দুই বছর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়ে ১৩ রাশিয়ান নাগরিককে অভিযুক্ত করেছে। এদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্থিক জালিয়াতি এবং পাঁচজনের বিরুদ্ধে অন্যের পরিচয় ব্যবহারেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের বিশেষ তদন্তে এদের নাম এসেছে বলে খবর। ৩৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে সেইন্ট পিটার্সবার্র্গ ভিত্তিক একটি ইন্টারনেট গবেষণা সংস্থাসহ রাশিয়ার তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এ কোম্পানিগুলো ‘মার্কিন রাজনীতিতে অনৈক্যের বীজ বপন করার কৌশলগত লক্ষ্যে’ কাজ করছিল বলেও এফবিআই অভিযোগ করেছে। অভিযোগের বিষয়ে শুক্রবার সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে। দিনের শেষভাগে এক টুইটে প্রেসিডেন্ট রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি ‘কার্যত স্বীকার’ করে নিলেও এর সাথে তার বা রিপাবলিকান শিবিরের কোনো ধরনের সংযোগ ছিল না বলেও ফের দাবি করেছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মস্কোর হস্তক্ষেপ বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দাবিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে কংগ্রেস ও বিচার বিভাগের তদন্তকেও বারবার এক হাত নিয়েছিলেন তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও অন্য কর্মকর্তারা সব সময়ই মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
রয়টার্স জানায়, মুলারের অভিযোগপত্রে রাশিয়ান নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর নাম এলেও এদের সাথে মস্কোর সরাসরি সংযোগ থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এফবিআইর দাবি, ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ‘প্রজেক্ট লাখতা’ নামে মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের কাজ শুরু করে অভিযুক্তরা।
অভিযুক্তরা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে মার্কিন নাগরিক সেজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। পরিচয় পাল্টে তারা আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, যেন সাধারণ আমরিকানরা তাদের ভিনদেশী না ভাবে। এ রাশিয়ানরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অর্থও সংগ্রহ করেছে ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়। এ গোষ্ঠীর ব্যয় প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ডলারে দাঁড়ায় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষ্য ছিল হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে অপমানজনক তথ্য সরবরাহ। তারা টেড ক্রুজ ও মার্কো রুবিওর মতো অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচারে কালি লাগানোর কাজেও নিয়োজিত ছিল। তাদের সমর্থন ছিল প্রথমে বার্নি স্যান্ডার্সের প্রতি এবং পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প।’ মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রজেনস্টাইন পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও প্রার্থীদের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ ছড়িয়ে দিতে ‘তথ্য যুদ্ধ’ শুরু করেছিল।
অভিযোগ ‘হাস্যকর ও ভিত্তিহীন’
এ দিকে ১৩ রুশ নাগরিক ও তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগকে ‘হাস্যকর ও ভিত্তিহীন’ অ্যাখ্যা দিয়েছে মস্কো। ফেইস বুক পোস্টে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘১৩ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে! নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর শত কোটি ডলার বাজেটের বিপরীতে মাত্র ১৩! গোয়েন্দা ও পাল্টা গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে এবং প্রযুক্তির এমন উন্নয়নের মধ্যে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন নয় কী? অবশ্যই।’
অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে তাদের একজন ইয়েভগেনি প্রিগোজিনও মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কথা অস্বীকার করেছেন। ‘পুতিনের বাবুর্চি’ বলে খ্যাত প্রভাবশালী রুশ ব্যবসায়ী প্রিগোজিন বলেন, ‘আমেরিকানরা খুব চিত্তাকর্ষক। তারা তাই দেখে, যা তারা দেখতে চায়। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে। তালিকায় নাম দেখে আমি খুব একটা চিন্তিত বোধ করছি না, তারা যদি শয়তানকে দেখতে চায়, দেখুক।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন