সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনি নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেওয়া ও কর্তব্যকাজে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন সাতক্ষীরা সদর থানার ওই সময়ের ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা, বর্তমান ওসি এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল। এছাড়া নিখোঁজের ওই ঘটনায় সদর থানাকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, মোকলেসুর রহমান জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে পারবেন। এছাড়া তিনি ইচ্ছা করলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিখোঁজের ঘটনায় মামলাও করতে পারবেন। আদালত এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জনি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনির নিখোঁজ কিংবা অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা বা জিডি না নেওয়ার মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা এবং অবহেলার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মোটেই কাম্য নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর নিখোঁজের এ কাজটি কোনো অপরাধী চক্রের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আরো বেশি। যাতে ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মানুষ নিখোঁজের অভিযোগ অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায় এড়াতে পারে না।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক অনুসন্ধান ও থানার রেকর্ডপত্রসহ (জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার) দালিলিক সাক্ষ্য এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় গত ৪ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে জনি নামের কোনো ব্যক্তিকে সাতক্ষীরা থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার পূর্বক আটক রাখা এবং পরবর্তীতে নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি।
মৌখিক সাক্ষ্য অনুযায়ী ভিকটিমকে এসআই হিমেল কর্তৃক থানায় আনার বিষয়টি প্রকাশিত হলেও এ সকল সাক্ষী হলো অভিযোগকারী কর্তৃক উপস্থাপিত সাক্ষী। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা থানায় আনার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। থানায় রক্ষিত সকল রেজিস্ট্রার পর্যালোচনাকালেও থানা হেফাজতে ভিকটিমকে রাখার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় না। ফলে এসআই হিমেল কর্তৃক ভিকটিমকে গ্রেপ্তারপূর্বক থানা হেফাজতে রাখার বিষয়টি অস্পষ্ট। ফলে জনি নিখোঁজের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত না কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কোনো অপরাধীচক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা প্রমাণ করা যায়নি।
সদর থানার তৎকালীন ওসি মো. এমদাদুল হক শেখের পরবর্তী ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা তার সময়কালে অভিযোগের বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নিখোঁজ জনির প্রকৃত অবস্থান জানার আরও একটি সুযোগ নষ্ট হয়েছে মর্মে কমিটির নিকট অনুমেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য কর্ম (মামলা/জিডি/তদন্ত/অনুসন্ধান) যথাযথভাবে পালন না করায় আজ অবধি নিখোঁজ হওয়ার প্রকৃত ঘটনাটি যেমন উদঘাটিত হয়নি তেমনই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। ফলে উক্ত ঘটনায় সদর থানা পুলিশের যেসব সদস্য দায়িত্ব ও কর্তব্যপালনে চরম অদক্ষতা এবং অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এর আগে মোকলেসুর রহমান জনির খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর পিবিআই তদন্ত করে। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের আইজির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের (খুলনা বিভাগ) বিশেষ পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদারকে প্রধান করে কমিটি করা হয়।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন