চীন-ভুটান-ভারত সীমান্তের দোকলামের উত্তেজনা ছিল বেশ কিছু দিন বড় ধরনের সঙ্কট। তবে ওই সমস্যা মিটে গেছে বলে ভারত ও চীন যে দাবি করেছিল তা সত্যি নাও হতে পারে বলে ভারতীয় মিডিয়া এখন দাবি করছে।
কারণ, উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় পোস্ট থেকে মাত্র ৮১ মিটার দূরে চীন তাদের পরিকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে। যা দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন আসলে কখনো সেনা প্রত্যাহার করেনি। বরং সেনা ঘাঁটি তৈরির কাজ চালিয়ে গেছে। সিকিম সেক্টরে দোকলামের নিয়ন্ত্রণ ঘিরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছিল ভারত ও চীনের সেনা।বাহিনী। ৭০ দিন পরে উভয় দেশই সেনা প্রত্যাহার করে নেয় বলে দাবি করা হয়। অবশ্য, চীন কখনোই সুস্পষ্টভাবে বলেনি, তারা তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
পাঁচ মাস পরে তোলা উপগ্রহ চিত্র কিন্তু অন্যকথা বলছে। বিতর্কিত এলাকায় ইস্ট–ওয়েস্ট রোড বরাবর একের পর এক সেনাঘাঁটি বানাচ্ছে তারা। হেলিপ্যাড বানানোর স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বন্দুক বা ট্যাঙ্কের চিহ্ন না মিললেও সেখানে তার ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। চীনের ঘাঁটি থেকে সিকিম মাত্র ৮১ মিটার দূরে।
চীন নিয়ে সুর নরম রাওয়তের
কয়েক দিন আগেই চীনকে তোপ দেগেছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। দোকলামে চীনা সেনা বড় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে বলে বুধবার দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ। কিন্তু এ দিন চীন সম্পর্কে সুর অনেকটাই নরম করে ফেললেন রাওয়ত।
সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনা গতিবিধি নিয়ে সরব হন সেনাপ্রধান। সেই মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ৈর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দোকলাম সমস্যার পরে দু’দেশ ফের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারতীয় সেনাপ্রধানের এমন মন্তব্যে ফের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বুধবার আবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তের দোকলামে বড় ধরনের সামরিক কমপ্লেক্স তৈরি করছে বেইজিং। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু উপগ্রহ চিত্রে সেই কমপ্লেক্সের অবস্থানও দেখানো হয়েছে।
বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে রাইসিনা আলোচনা প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে যান সেনাপ্রধান। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দু’দেশের সম্পর্ক দোকলাম সমস্যার আগে যে স্তরে ছিল সেই স্তরে ফিরে গেছে। ফলে আপাতত তেমন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’ দোকলামে যে চীনা সেনা এখনও রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন রাওয়ত। তার দাবি, চীনা সেনাদের সংখ্যা এখন অনেক কম। তাদের হাতে যে পরিকাঠামো রয়েছে তার বেশিরভাগটাই অস্থায়ী। রা ওয়তের আশ্বাস, ‘‘ভারতীয় সেনাও ওই এলাকায় রয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে তার মোকাবিলা করা হবে।’’
নাম না করে বুধবার পাকিস্তানকে নিশানা করেছেন রাওয়ত। তার কথায়, ‘উগ্রবাদীরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যে সব দেশ উগ্রবাদীদের মদত দেয় সেই সব দেশেরও মোকাবিলা করা প্রয়োজন।’’
এই প্রসঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উগ্রবাদীদের কার্যকলাপ সম্পর্কেও মুখ খুলেছেন তিনি। তার মতে, যে সব সোশ্যাল মিডিয়া সাইট উগ্রবাদীরা প্রায়শই ব্যবহার করে সেগুলির উপরে কিছু নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা প্রয়োজন। রাওয়তের বক্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ অনেকেই পছন্দ করবেন না। কিন্তু ভাবতে হবে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে সাময়িক নিয়ন্ত্রণ মেনে নেওয়া যায় কি না।’’
সেনাপ্রধানের আক্ষেপ, সেনার আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি সময় লাগছে। এখন বাহিনীর প্রচুর নজরদারির সরঞ্জামের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে এ দিনই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ‘মেক-২’ শ্রেণিতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই শ্রেণিভুক্ত উপকরণ তৈরিতে কোনো সরকারি বিনিয়োগ হয় না। এই ধরনের উপকরণের ক্ষেত্রে এখন থেকে কোনো সংস্থা সরাসরি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এত দিন প্রয়োজনে বাহিনীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হতো। এই সিদ্ধান্তে খুশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন