বিভিন্নক্ষেত্রে সরঞ্জামের ঘাটতি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না ভারতীয় নৌবাহিনী। এই ঘটতি কাটিয়ে উঠতে নতুন মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার (এমআরএইচ) কেনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে উদ্বেগ কমছে না বলে নৌবাহিনীর এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নৌবাহিনীর এন্টি-সাবমেরিন ও এন্টি-শিপ যুদ্ধের পাশাপাশি আকাশ পথে আগাম সতর্কীকরণ সামর্থ্য বাড়াতে এসব হেলিকপ্টার অতি জরুরি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
হেলিকপ্টারের মতো জরুরি সরঞ্জামের ক্ষেত্রে গত কয়েক দশক ধরে প্রচণ্ডরকম ঘাটতিতে ভুগছে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে।
তাই ২৪টি এমআরএইচ কিনতে সরকারকে রাজি করানোর জন্য নৌবাহিনী নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোর পেছনে ব্যয় হবে ভারতীয় মুদ্রায় ১০,০০০ কোটি রুপি।
প্রায় দুই দশক আগে বয়স উত্তীর্ণ হওয়া সীকিং ৪২/৪২এ হেলিকপ্টার নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীকে এখন চলতে হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত ভাইস এডমিরাল শেখর সিনহা বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর আগেই এসব হেলিকপ্টার বাতিল করা উচিত ছিলো। অপারেশন পরিচালনার জন্য হেলিকপ্টার খুবই জরুরি।’
ভারতের বিমানবাহিনী রণতরী আইএনএস ভিরাট এর সঙ্গে সীকিং ৪২/৪২এ মডেলের হেলিকপ্টারগুলো আসে। ব্রিটেনের কাছ থেকে কেনা এই রণতরী ১৯৮৭ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়। গত বছর ভিরাট অবসর নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৬টি সিকোরস্কি এস-৭০বি সীহক হেলিকপ্টার কেনার প্রচেষ্টায় গত বছর প্রায় চুক্তির কাছাকাছি পৌছায় ভারতীয় নৌবাহিনী। কিন্তু মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। হেলিকপ্টারগুলো লকহিড মার্টিনের তৈরি। এখন আবারো হেলিকপ্টারগুলো কেনা নিয়ে আলোচনা শুরুর চেষ্টা চলছে বলে নৌবাহিনীর সূত্রগুলো জানায়।
হেলিকপ্টার স্বল্পতার কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীকে হেলিকপ্টারের রেশনিং করে চলতে হচ্ছে বলে সিনহা জানান।
কিন্তু নতুন হেলিকপ্টার কেনার জন্য নৌবাহিনী এখন কোন পথে অগ্রসর হবে -এগুলো সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) চুক্তিতে কেনা হবে নাকি বিশ্বব্যাপী দরপত্র আহ্বান করা হবে– তা পরিস্কার নয়।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে এস-৭০ বি সীহক বিক্রির জন্য জি-টু-জি চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই চুক্তি কিছুটা জটিল হলেও এতে আর্থিক স্বচ্ছতা অনেক বেশি।
এমআরএইচ ছাড়াও নেভাল ইউলিটি হেলিকপ্টার (এনইউএইচ) ও নেভাল মাল্টিরোল হেলিকপ্টার (এনএমআরএইচ) কেনার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর হাজার হাজার কোটি রুপি প্রয়োজন।
নৌবাহিনীর মান্ধাতা আমলের ফরাসী মডেলের চেতাক চপার বদলে ফেলার জন্য ১১১টি এনইউএইচ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে গত অক্টোবরে একটি উদ্যোগ -একসেপটেন্স অব নেসেসিটি (এওএন) গ্রহণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এওএন হলো জটিল প্রতিরক্ষা ক্রয়ের প্রথম ধাপ মাত্র। এই প্রক্রিয়া শেষ করে চূড়ান্ত চুক্তি করতে দশকও লেগে যেতে পারে।
তাই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নৌ কর্মকর্তা বলেন, ‘এওএন’কে বড় কিছু বলে আমি করি না। আগেও এমন এওএন গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে কোনো সুরাহা হয়নি।
ভারতীয় নৌবাহিনীর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এর ১৪০টি যুদ্ধজাহাজের বেশিরভাগের কোনো হেলিকপ্টার নেই। অথচ অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা, মেডিকেল ইভাক্যুয়েশন, এন্টি-পাইরেসি ও এন্টি টেররিজম অপারেশন, যোগাযোগের দায়িত্ব পালন, মানবিক সহায়তা ও নজরদারিসহ অনেক কাজে এসব ফাইভ-টন ক্লাস হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করা হয়।
হেলিকপ্টার কিনতে বহু বছর লেগে যেতে পারে বলেও নৌবাহিনীর আশংকা কম নয়। ঠিক আজকে এনইউএইচ কেনার চুক্তি করা হলেও ১১১টি টুইন-ইঞ্জিন চপার ভারতে পৌছতে ১৩ বছর লাগবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন