পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে মুসলমান দেশগুলোর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, সত্যের জয় হবেই! একটা সময় সবাই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরাইল-ফিলিস্ত্মিন শান্ত্মি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী বলে দাবি করেছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। বুধবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার দেশ এখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্ত্মি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো ভূমিকায় দেখতে চায় না- এমন ঘোষণা দেয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে এই প্রতিক্রিয়া এলো। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, ট্রিবিউন, এএফপি, বিবিসি, এপি
আন্ত্মর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, 'অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন'র (ওআইসি) নেতারা গত বুধবার তুরস্কের ইস্ত্মাম্বুলে জরম্নরি বৈঠকে পূর্ব জেরম্নজালেমকে ফিলিস্ত্মিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দিলে এর প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বলেন, অনেক দেশই শেষ পর্যন্ত্ম জেরম্নজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেবে এবং দূতাবাস সরিয়ে নেবে। নেতানিয়াহু বলেন, ওআইসির বক্তব্যে তিনি অবাক হননি।
গত ৬ ডিসেম্বর জেরম্নজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, শিগগিরই তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরম্নজালেমে নিয়ে যাওয়া হবে। এই ঘোষণার পর নিন্দার ঝড় ওঠে আন্ত্মর্জাতিক মহল থেকে। উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্ত্মর্জাতিক জোটগুলো। প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরম্ন পোপ ফ্রান্সিসও।
এই ইসু্যতে আলোচনা করতে বুধবার ওআইসির জরম্নরি বৈঠক ডাকেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোগান। বৈঠকে জেরম্নজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত্মটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে ওআইসি। ইস্ত্মাম্বুলে আয়োজিত এই বৈঠকে আন্ত্মর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পূর্ব জেরম্নজালেমকে ফিলিস্ত্মিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ৫৭ মুসলিম দেশের এই জোট। বিশ্বের অন্যসব দেশকেও একই সিদ্ধান্ত্ম নেয়ার আহ্বান জানায় তারা। জেরম্নজালেমকে ফিলিস্ত্মিনের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ওআইসির পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তাকে 'ইস্ত্মাম্বুল ঘোষণা' নামে ডাকা হচ্ছে।
বুধবারের বৈঠকে ইসরাইলের অবৈধ বসতির বিরম্নদ্ধে জাতিসংঘকে ব্যবস্থার নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওআইসি। ইসলামী সংস্থটি জানায়, এই সিদ্ধান্ত্ম থেকে সরে না এলে সহিংসতার দায় নিতে হবে ট্রাম্পকেই। সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য শান্ত্মি প্রক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রকে অযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন ফিলিস্ত্মিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, জেরম্নজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর ফিলিস্ত্মিনিরা মধ্যপ্রাচ্য শান্ত্মি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো ভূমিকা মেনে নেবে না। ট্রাম্পের ওই ঘোষণা বিশ্ব শান্ত্মিকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
ট্রাম্পের স্বীকৃতিকে আন্ত্মর্জাতিক আইন পরিপন্থিও বলেছে ওআইসি। তবে ওআইসির স্বীকৃতি মানতে নারাজ নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, 'আমরা জেরম্নজালেমকে শুধু ইসরাইলি রাজধানী হিসেবে নয়, বরং সব ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করব।' তিনি আরও বলেন, ফিলিস্ত্মিনিরা বাস্ত্মবতা মেনে নিলে শান্ত্মি প্রক্রিয়া সহজ হবে।
শান্ত্মি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরাইল-ফিলিস্ত্মিন শান্ত্মি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 'বরাবরের মতোই এখনো শান্ত্মির জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ'। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত্ম একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হবে। তবে বিবৃতি প্রকাশের আগেই এর বিষয়বস্তু জানিয়ে দেয়ায় ওই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ করেননি।
গাজায় সীমান্ত্ম পারাপার বন্ধ
জেরম্নজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়ার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় গাজায় সবগুলো সীমান্ত্ম পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তারা জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে গাজা উপত্যকায় পণ্য সরবরাহের প্রধান ক্রসিং (পারাপার) কারেম শ্যালম এবং হেঁটে যাতায়াতের ক্রসিং ইরেজ বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে। তবে কতদিন বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরিষ্কার করা হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন