জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টিকে যদি ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর প্রচেষ্টার অংশ বা কৌশল বলা হয়, তাহলে আমরা মনে করতে পারি, ট্রাম্প স্পষ্টতই মূর্খতার প্রমাণ দিয়েছেন। মূলত ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ একটি বিদ্বেষমূলক ও একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা বৃহৎ পরিসরে তার রাজনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডনাল্ড ট্রামপ কোনো অপরিপক্ব মেধাবী কৌঁসুলির মতো আচরণ করেননি যার কোনো পরীক্ষা খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। তিনি একজন অগ্নিসংযোগকারীর মত আচরণ করেছেন- যিনি অসতর্কভাবে একটি আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, যেটির পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। কার্যত, ফিলিস্তিনের বর্তমান বিচ্ছিন্ন সহিংসতা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, ট্রাম্প ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমেরিকার ভূমিকাকে দুর্বল করেছেন।
তিনি সেখানকার বসতি স্থানান্তর ও তাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনাকে অবমূল্যায়ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তার আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরে নিঃসন্দেহে এই বিষয়টি উপলব্ধি করবেন। ১৯৪৮-৪৯ আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই জেরুজালেমের পশ্চিম অংশ ইসরাইলের অধীনে রয়েছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তারা পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয়। উল্লেখ্য, মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টান তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছেই শহরটি পবিত্র। ইসরাইল যখন জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৯৫ সালে যখন মার্কিন কংগ্রেসে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আইন পাস হয়, তখন কোন বড় দেশ ইসরাইলের পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেয় নি। কারণ, ফিলিস্তিনিরাও শহরটিকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী বানাতে চায়। এছাড়া ১৯৬৭ সালের পূর্বসময়ে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী জাতিসংঘ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের দ্বিরাষ্ট্র সমাধান চায়। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো জানিয়েছে, সীমান্ত নিয়ে জটিলতা অবসানের পরেই জেরুজালেমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।
কেন্দ্রীয় ভূমিকা
১৯৯৫ সালের জেরুজালেম দূতাবাস আইন নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্টরা এসব আইনে হস্তক্ষেপ করেননি এই জন্য যে, নতুন কিছু ঘটলে তা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা আমেরিকাকে এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় চরিত্র থেকে সরিয়ে দিতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, তার পদক্ষেপ জেরুজালেমে ইসরাইলের সীমানা বা বিতর্কিত সীমান্তগুলোর বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত অবস্থা নির্দেশ করে না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু সমঝোতার ধরন পাল্টে দেয়া পদক্ষেপ নেয়ার পর তার এমন যুক্তি মৌলিকভাবে স্ববিরোধী। মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকার নতুন ‘বেস্টফ্রেন্ড’সহ বিশ্ব নেতারা তার এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সুবিধাভোগী হবে ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থিরা। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। যেসব আরব দেশ ও কট্টর ইসলামপন্থিরা ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্ত্তিত্বকে অস্বীকার করে, কট্টর ডানপন্থিরা তাদেরও বিরোধিতা করে ।
বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ পূর্তিতে ট্রাম্প জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিলেন। মনে করা হয়, এই ঘোষণার সঙ্গে তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়া, তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে, তিনি কাজের মানুষ। যিনি নির্বাচনের পূর্বে দেয়া অঙ্গীকারগুলো পূরণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি আরো মজবুত করতে চেয়েছেন। কেননা ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পিছনে রাশিয়ার হাত রয়েছে এই বিষয়ে তদন্তের মুখে রয়েছেন। তিনি বলেন, অন্য প্রেসিডেন্টরা অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আজ আমি তা ঘোষণা করছি। আর আমাদের কাছে এই ঘোষণা একটি বিদ্বেষপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা পুরো বিশ্বকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।
(জ্যামাইকা গ্লিনারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন