ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ফিলিস্তিনের পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন তা রুখে দিতে মুসলমানদেরকে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন।
ড. রুহানি আরো বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই মুসলিম দেশগুলো দ্রুত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় তুলে ধরেছে এবং ওআইসি'র শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে ট্রাম্পের ভুল পদক্ষেপের বিপরীতে সঠিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "বেলফোর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে ক্ষতের শুরু হয়েছিল একশ' বছর ধরে তার ব্যথা অনুভব করছে মুসলমানেরা এবং ট্রাম্পের বেআইনি ঘোষণার মধ্যদিয়ে এখন নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। কিন্তু সমস্ত উপায় অবলম্বন করে আমেরিকার এই অভদ্রোচিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"
ওআইসি সম্মেলন
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, "কোন উপাদান ও কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের নিষ্ঠুর এবং ধর্ম অবমাননাকর সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করেছে তাও আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কিছু দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এমনকি, ইসরাইলের সঙ্গে পরামর্শ ও সহযোগিতা করার ঘটনা ট্রাম্পকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।"
হাসান রুহানি বলেন, ইসরাইলকে মোকাবেলার পরিবর্তে আমাদের অঞ্চলের কিছু দেশ ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়ে আমেরিকা ও ইহুদিবাদীদের সঙ্গে জোট করে চলেছে। এ ধরনের তৎপরতায় ইসরাইল স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং চেপে ধরবে। তিনি ইহুদিবাদীদের বিপজ্জনক প্রকল্প সম্পর্কে মুসলিম দেশগুলোকে সতর্ক করেন।
সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রতিনিধিরা
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, গত কয়েক দশক ধরে ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও নির্যাতন করে আসছে এবং তার প্রতি আমেরিকা অন্ধ সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই আমেরিকাকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই পরিষ্কার যে, আমেরিকা কখনো সৎ মধ্যস্থতাকারী ছিল না এবং কখনো হবেও না।
ফিলিস্তিনের চলমান সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট রুহানি সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- মার্কিন পদক্ষেপের নিন্দা জানানো, নানা মতভেদ সত্ত্বেও বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করা, ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলা, ফিলিস্তিন ইস্যুকে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ এজেন্ডায় রাখা ও ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্রের বিপদ ভুলে না যাওয়া। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদকে নিজেদের দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি ইহুদিবাদী সরকারের পদক্ষেপের প্রতি মুসলিম বিশ্বকে প্রতি মুহূর্তে নজরদারি করার আহ্বান জানান এবং প্রয়োজনীয় ইস্যুতে ওআইসি'র মন্ত্রী পর্যায়ে কিংবা শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব দেন।
পার্সটুডে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন