সরাইখানাটির নাম বাসবি স্টোপ ইন। ইংল্যান্ডের উত্তর ইয়র্কশায়ারে গেলেই দেখতে পাবেন ছিমছাম নীরব এ সরাইখানাটিকে।
প্রশ্ন করতে পারেন- তো কী হয়েছে? সরাইখানা দেখার কি আছে? জ্বি হ্যাঁ, সরাইখানাটি আর সাধারণগুলোর মতো নয়। এর অসাধারণত্বটা হল- এটি ভৌতিক ও রহস্যময়।
এখানে ছিল এমন এক অভিশপ্ত চেয়ার, যার নাম ‘চেয়ার অব ডেথ’ মানে মৃত্যুর চেয়ার।
এই চেয়ারে কেউ বসার অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। এমন একটি অভিশপ্ত চেয়ারকে সঙ্গে নিয়ে সরাইখানাটি চলছিল কয়েক যুগ ধরে।
তবে ইংল্যান্ডের মতো আধুনিক দেশেও এ অভিশাপকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। ফলে সরাইখানা থেকে চেয়ারটি জাদুঘরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চেয়ারের পেছনে অভিশপ্ত তকমাটি কেন জুড়ে গেল, চলুন তা জেনে আসি। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। ইয়র্কশায়ারে বাস করতেন থমাস বাসবি নামে এক ব্যক্তি। তিনি একটি পানশালা চালাতেন।
পানশালাটি তার অতিপ্রিয় ছিল। তার চাইতেও প্রিয় ছিল পানশালায় রাখা একটি চেয়ার। ওক কাঠের তৈরি এ চেয়ারটিতে বসে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
১৭০২ সালে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে বাসবি তার শ্বশুর মহাশয়কে খুন করে ফেলেন। বাসবিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ ইচ্ছা কী জানতে চাইলে তিনি জীবনের শেষ ইচ্ছাস্বরূপ তার প্রিয় সেই পানশালায় প্রিয় সেই চেয়ারে বসে জীবনের শেষ খাবার খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
যথারীতি তার জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়। পেয়ালায় শেষ চুমুকটি দেয়ার পর থমাস বাসবি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘এই চেয়ারে যে বসবে সেই তাৎক্ষণিক মারা যাবে’।
এ কথার পর কেউ আর সেই চেয়ারে বসতে সাহস করেনি। সবার কাছে এই চেয়ার ছিল অভিশপ্ত চেয়ার।
এভাবে কেটে গেল ২০০ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা। এক বৈমানিক বাসবির পানশালায় আশ্রয় নেন আর ধুলোয় পড়ে থাকা চেয়ারটিকে পরিষ্কার করে এতে বসেন। সেই বৈমানিক যুদ্ধ শেষ করে আর বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি।
এতে লোকজনের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে, অভিশপ্ত চেয়ারে বসার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে অলৌকিকতায় অবিশ্বাসীরা যুক্তিযুক্তভাবে যুদ্ধকেই দায়ী করেন।
১৯৬৭ সালে ঘটে আরেক ঘটনা। ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর দুই পাইলট ওই চেয়ারে বসেছিলেন।
খাওয়া-দাওয়া শেষে পানশালা থেকে বের হতে না হতেই রাস্তায় এক ট্রাক তাদের পিষে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা অভিশপ্ত চেয়ারকে দুষলেও যুক্তিবিদদের আপত্তি ছিল মাতাল হওয়াতে তাদের এমন অপমৃত্যু ঘটেছে।
তবু চলছিল বাসবি অভিশাপের গুঞ্জন। তাই ১৯৭০ সালে দুজন স্থপতি এই চেয়ারে বসে অভিশাপটি ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। তবে তাদের একজন বসতে পারলেও অন্যজনের বসা হয়নি। সেদিন বিকালেই চেয়ারে বসা সেই স্থপতি একটি গর্তে পড়ে অকাল মৃত্যু ঘটে।
একবার এক কার্পেন্টার বাসবির অভিশাপকে কুসংস্কার বলে এতে বসে পড়েন। এর পর তিনি একদিন কাজ করা অবস্থায় বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা যান।
পানশালায় আসা এক নারী তিনি পানরত অবস্থায় বেখেয়ালী হয়ে ওই চেয়ারটাতে বসে পড়েন। পরবর্তী সময়ে তার মস্তিষ্কে টিউমার দেখা দেয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এমন অপমৃত্যু ও আকস্মিক মৃত্যু একের পর এক ঘটতেই থাকে। পানশালার মালিক এতে ভড়কে যান। তাই তিনি চেয়ারটিকে তার পানশালার বেসমেন্টে রাখার নির্দেশ দেন।
যে কর্মচারী চেয়ারটিকে বেসমেন্টে রাখতে যান ভুলবশত বিশ্রাম নিতে তিনি কিছুটা সময় সেই চেয়ারটিতে বসে পড়েন। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর লোকজন অভিশপ্ত চেয়ারকে সাক্ষাৎ মৃত্যুযন্ত্র আখ্যা দিতে থাকে। গুঞ্জন চলে যায় মেয়রের কানে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ১৯৭২ সালে ইংল্যান্ডের উত্তর ইয়র্কশায়ারের স্থানীয় এক জাদুঘরে চেয়ারটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভুল বা কৌতূহলী হয়ে যেন কেউ চেয়ারটিতে বসতে না পারে সে জন্য অভিশপ্ত চেয়ারটি মাটি থেকে ৫ ফুট ওপরে ঝুলিয়ে রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
রহস্য ও ভুতুড়ে ঘটনায় অবিশ্বাসী মানুষেরা ডেথ অব চেয়ারে বসে অপমৃত্যুকে কাকতালীয় বললেও তাদের কেউ-ই এতে বসে তা ভুল প্রমাণের সাহস আজও করেননি। তাই ডেথ অব চেয়ারের রহস্য, আজও রহস্যই রয়ে গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন