২০১৫ সালের কথা, মসুলের বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসার পর জার্মানির একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পান নাদিয়া।এরপর জাতিসংঘের ‘গুডউইল এম্বাসেডর’ হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০১৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পুরুষ্কার পান নাদিয়া মুরাদ। বন্দিদশায় তার ওপর নির্মম নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে ‘দ্য লাস্ট গার্ল’শিরোনামে একটি বই লিখেছেন তিনি।‘পেঙ্গুইন র্যা ন্ডম হাউস’এর প্রকাশনায় বইটি ৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির ভূমিকায় নাদিয়া লিখেন- ২০১৪ সালের উত্তর ইরাক। ইয়াজেদি সম্প্রদায়ের একটি গ্রাম কোচো। বেশিরভাগ মানুষ হত দরিদ্র। তবুও হাসি-আনন্দের কোনো অভাব ছিল না তাদের। সব কিছুই যথারীতি চলছিল। হঠাৎ আইএস জঙ্গিরা হানা দেয় সাজানো গোছানো ওই গ্রামে। খুন, ধর্ষণ, লুটপাট এর সঙ্গে সঙ্গে বন্দী করা হচ্ছিল গ্রামবাসীদের। মেয়েদেরকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় মসুলে।তাদেরই একজন নাদিয়া মুরাদ।
নিজের বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা সবার কাছে তুল ধরতে হাতে কলম নেন নাদিয়া। ‘দ্য লাস্ট গার্ল’শিরোনামে বইটিতে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি নারীদের ধর্ষণসহ নানা নির্মম নির্যাতন-যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রায় ৩ বছর আগে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এ ইয়াজেদী নারী বলেন, কাউকে না কাউকে তো এসব কথা তুলে ধরতেই হত। বিশ্ববাসী জানুক কীভাবে ইয়াজেদী নারীদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে আইএস জঙ্গীরা।
নাদিয়া মুরাদ তার বর্ণনায় উল্লেখ করেন- গ্রামের একটি স্কুলে এনে বন্দী করা হয় সবাইকে। পুরুষদের আলাদা করে স্কুলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। নাদিয়া শুধু ভিতর থেকে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ শুনতে পান। নিজের ছয় ভাইকে সেদিন হারান নাদিয়া। তারপর অন্যদের সাথে মসুলের বন্দি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হন তিনি।
নাদিয়ার বর্ণনায়, বাসে করে যাওয়ার সময় থেকে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একজন আমার তলপেটে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে।সেই আমাকে কিনে নেয়। বন্দী জীবনের সেসব দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াজেদী এ নারী বলেন, “ইউরোপ, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া থেকে প্রচুর জঙ্গি আসত , আর তারা নিত্য দিন ধর্ষণ করত আমাকে। ধর্ষণ আগে প্রার্থনা করিয়ে নিত।
তবে এতকিছু পরেও হাল ছাড়েননি নাদিয়া মুরাদ। বন্দী দশার শুরু থেকেই পালানোর সুযোগ খুঁজতেন তিনি। একবার চেষ্টা করে ধরাও পরেন। এরপর শুরু হয় গণধর্ষণ। আবারও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। একদিন ধর্ষণ শেষে এক জঙ্গি দরজা বন্ধ না করেই চলে যান। এ সুযোগটিই কাজে লাগান তিনি। ‘ধরা পড়লেই নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহস ভর করে বেড়িয়ে পরেছিলাম’-বলেন নাদিয়া। আর পিছু ফিরে তাকাননি তিনি। ক্লান্ত নাদিয়া মসুলের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ঐ বাড়ির বাসিন্দারাই তাকে পরবর্তীতে মসুল থেকে পালিয়ে আসতে সাহায্য করে।
মুরাদ বলেন, মসুলে প্রায় ২০লাখ মানুষ বাস করে। আর সেখানে জঙ্গিদের হাতে ২ হাজার মেয়ে বন্দী হিসেবে আটক আছেন। তবে তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসে না। যারা সাহায্য করতে চায় তারা বিনিময়ে হাজার হাজার ডলার দাবি করে।
জঙ্গিদের হাতে নাদিয়ার মত বন্দী নারীদের কথা তুলে ধরতেই এ বই লিখেছেন বলে জানান জাতিসংঘের ‘গুডউইল এম্বাসেডর’ নাদিয়া। তিনি বলেন, জানি কী দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা! নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সেইসব নারীদের কাহিনী তুলে ধরছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন