এবার হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অর্ধ লাখেরও বেশি নাগরিককে দেশে ফিরে যেতে নোটিশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড দপ্তর থেকে ২০ নভেম্বর জারি করা নোটিশে হাইতির ৬০ হাজার নাগরিককে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত কট্টর অভিবাসন বিরোধী নীতির প্রতিফলন ঘটাতেই এমন একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
.
২০১০ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এই নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছিল। তাদেরকে পুরো স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নে অভ্যন্তরীণভাবে বেশ আলোচনা ছিল-সমালোচনাও ছিল। তবে ট্রাম্পের অভিবাসন সংস্কার নীতির আওতায় ওই ৬০ হাজার নাগরিককে বৈধতা দেয়ার কোনো বিবেচনা রাখা হয়নি। ২০১৯ সালের ২২ জুলাইয়ের মধ্যেই ওই নাগরিকদের দেশে ফিরতে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অ্যালাইন ডিউক জানিয়েছেন, সাত বছর আগে ঘটা ওই ভূমিকম্পে যারা বসতভিটা হারিয়েছিলেন, তাদের ৯৭ ভাগই পুনর্বাসিত হয়েছে নিজ দেশে এবং নিজ গৃহে ফিরে গেছেন। এতে মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়া ওই ৬০ হাজার নাগরিককে দেয়া সুরক্ষা সুবিধাকে আর বাড়ানো হবে না।
১৮ মাস সময় দেয়া প্রসঙ্গে অ্যালান ডিউক বলেন, এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং হাইতি সরকারও তাদের সুষ্ঠুভাবে প্রত্যাবর্তনে কাজ করবে বলে আশা করে যুক্তরাষ্ট্র।
এই খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে ভূমিকম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া এসব মানুষের। দীর্ঘ সাত বছর পর তারা আবার কিভাবে তাদের ফেলে আসা ভিটেমাটিতে ফিরে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবেন, সেটা নিয়ে দুশিন্তায় পড়েছেন তারা। এনপিআর নিউজের সাথে আলাপকালে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে বসবাসকারী একজন, হাইতিয়ানদের স্কুলশিক্ষক পিটারসন এক্সজিয়াস বলছিলেন, ‘এখনও আমাদের বসতি বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত খুবই হতাশাজনক ও স্বার্থপরের মতো। আমি এবং আমরা মনে প্রাণে নিজেদেরকে আমেরিকান ভাবি, যদিও গ্রিনকার্ড ছাড়া আমাদের আর সব কিছুই আছে’
যুক্তরাষ্ট্রে যত অবৈধ অভিবাসী আছে তার প্রায় তিন লক্ষাধিক এসেছে হাইতি থেকে।১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দপ্তরের একটি অধ্যাদেশ জারি হয়, যেখানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে হাইতির নাগরিকদের সুরক্ষা দেবার বিধান রাখা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যায়ক্রমে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন করতে যেই কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, তার প্রেক্ষিতেই গ্রিনকার্ড নেই এমন সব অভিবাসী প্রত্যাশীকেই দেশে ফেরত পাঠাতে কাজ চলছে। বিশেষত ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের যে প্রবণতা ছিল এত বছর, এসব উদ্যোগের ফলে সেটা কমে যাবে বলেই বিশ্বাস করছে সীমান্ত নিরাপত্তা বিভাগ।
উল্লেখ্য, এর আগে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার এমন আড়াই হাজার মানুষকে দেয়া বসবাসের অস্থায়ী সুরক্ষা আদেশ বাতিল করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন