মিয়ানমারের নাইপিদোতে এশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ১৩তম আসেম সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সংকট এড়িয়ে গেলেন মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি। দীর্ঘ পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় সু চি অবৈধ অভিবাসন ও সন্ত্রাসবাদসহ বিশ্বের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বললেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্পষ্ট কোন মন্তব্য করেন নি। তবে সম্মেলনের আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সু চি কে তাগিদ দেয় ইইউ ও চীন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সু চি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা ছড়াচ্ছে। এর ফলে সামাজিক ঐক্য নষ্ট হচ্ছে, পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। দ্য ওয়াশিংটন টাইমসের খবরে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নির্যাতন ও তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করায় মিয়ানমারের ওপর অভিযোগ রয়েছে। সু চির রোহিঙ্গা সম্পর্কে সরাসরি কথা না বললেও মিয়ানমার মনে করে রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী এবং তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, সু চির বক্তৃতা ওই দিকটিকেই তুলে ধরে।’
এছাড়া সু চি আরো বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় এশিয়া ও ইউরোপের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জঙ্গিবাদ একটা বড় সমস্যা, সবাইকে এক হয়ে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সুদৃঢ় গণতন্ত্র ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
সম্মেলন শুরুর আগে সু চির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ইইউ-র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সু চি কে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দেন। এর আগে তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রোববার মোগেরিনি ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রম ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কানো কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের পর আসেম সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরার কথা জানান
এছাড়া সম্মেলনের আগে সু চির সঙ্গে দেখা করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিন ধাপের সুপারিশ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। প্রথমত, রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের পলায়ন বন্ধে স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমতার ভিত্তিতে একটি সমাধানে পৌঁছানো। তৃতীয়ত, রাখাইনের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, আসেম সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং দুই মহাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলন শেষে ২২-২৩ নভেম্বর সু চির সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সূত্র: ডেইলি স্টার, ওয়াশিংটন টাইমস।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন