ইরানবিরোধী জোটে সৌদি আরব যে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাতে খুশি ইসরাইল। কিন্তু এর জন্য যে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে সেজন্য প্রকৃতপক্ষে খুশি নয় তেলআবিব।
.
সৌদি আরবের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু ইসরাইলের নেই। রিয়াদ লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে উৎখাত করেছে। অথচ হারিরি গত এক বছর ধরে এই সংগঠনটির (হিজবুল্লাহ) সঙ্গে শান্তিতে অবস্থান করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বে আর কোনো দেশ নেই যে দেশ ইরানের বিরুদ্ধে এর রকম কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এমনকি সৌদি আরব ইয়েমেনেও যুদ্ধে জড়িয়েছে, এই যুদ্ধে ইয়েমেনে অনেক লোক না খেয়ে মারা যাবে সে ব্যাপারেও রিয়াদ উদ্বিগ্ন। কিন্তু তারপরও তাদেরকে এটি করতে হয়েছে। তার একমাত্র কারণ হলো- ইরানের প্রভাব ঠেকানো। তাই সৌদি আরবের এ যুদ্ধ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে, ইয়েমেনিদের বিরুদ্ধে নয়।
ফিলিস্তিনের হামাস যাতে তেহরানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি না করে সেজন্য হুঁশিয়ার করেছে সৌদি আরব। সেইসঙ্গে ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটনকে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ। এই অবস্থায় সুন্নী অক্ষে ইসরাইল যোগ দিলে খুশিই হবে সৌদি আরব। আর তাতে মঙ্গল হবে যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের, যিনি ইতোমধ্যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে ১১ জন মন্ত্রীকে বন্দি করার সাহস দেখিয়েছেন, এমনকি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি হতেও দ্বিধা করছেন না।
সৌদি আরব হলো ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের স্বপ্নরাজ্য। আরব রাষ্ট্রগুলো পারলে ইসরাইলকে চ্ছিন্নভিন্ন করে দেয়, সেখানে ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরব যে ভূমিকা রাখছে তা ইসরাইলের জন্যই শাপে বর হয়ে দেখা দেবে।
কেউ হয়তো মনে করতে পারেন, আরব শক্তির- যারা ইসরাইলকে সরাসরি শত্রু ভাবে- সঙ্গে যখন তেলআবিবের একটি চুক্তি হবে তখন ইসরাইল-ফিলিস্তিনে আরব বিশ্বের কিছু স্বার্থ বিবেচনার দাবি উঠবে। উদারণস্বরূপ, সৌদি আরবের শান্তি প্রস্তাবের বিষয়টি উঠবে, যেখানে আরব স্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবের ওই শান্তি প্রস্তাবে যদি তেলআবিব সাড়া দেয়, এমনকি রিয়াদকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয় তাতেও ইসরাইলের কোনো ক্ষতি হবে না।
মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আমিরাত ও সৌদি আরবকে নিয়ে এই উদ্দেশ্যে একটি জোট গঠন অযৌক্তিক কিছু হবে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আরব দেশগুলোর সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি করেছেন তা গর্ব করার মতো, এমনকি যেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের শান্তিচুক্তি নেই তাদের সঙ্গেও। মিসরের সঙ্গে করা মৈত্রি ভালোভাবেই চলছে, আর দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে জর্ডানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে, অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত নীরব অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলের জন্য এর চেয়ে ভালো সমন্বয় আর কী হতে পারে?
কিন্তু সমস্যা হলো- সৌদি আরবের সঙ্গে স্বার্থের দ্বন্দ্বেও বড় ধরনের ত্রুটি আছে। এই জোটের জন্য ইসরাইলকে একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে। ইসরাইল জানে যে, চির শত্রুর (ইরান) বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোর জোটের সঙ্গে তারা সহযোগিতা করছে, কিন্তু এর মাধ্যমে প্রকৃত শান্তিতে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। ইরানবিরোধী আরব জোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আসবে, সেটা ইসরাইলের কাছে মূল্যহীন। বরং অর্ধকোটি সেটলারের (বসতি স্থাপনকারী) সুবিধার্থে এবং ইসরাইলি গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে তা বিসর্জন দেবে তেলআবিব। কারণ সৌদি আরব কিংবা আরব রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে জোট খালি খালি- তা সম্ভব নয়!
এ কারণেই ইয়েমেন থেকে সৌদি রাজধানীতে যখন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে যখন উৎখাত বা ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তখন তেলআবিব আনন্দিত হয়, কারণ এ দুটি ঘটনাই ইসরাইলকে ইরানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু যখন কেউ সৌদি প্রস্তাবিত শান্তি প্রক্রিয়ার কথা বলে তখন তা সজারুর কাঁটার মতো খোঁচা দেয়।
আরব বসন্তের সাত বছর পার হয়েছে এবং ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের তিন হয়ে গেছে, আর মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় মিত্ররা নানাভাবে তাদের রূপ বদলাচ্ছে। রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের মতো যারা সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে তারাই কূটনৈতিক সাফল্য ভোগ করে। এই রকম একটি সুযোগ এখন ইসরাইলের সামনে রয়েছে। তবে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে ইসরাইলকে আগে ফিলিস্তিন সম্পর্কে ভালোভাবে শিক্ষা নিতে হবে। কারণ ফিলিস্তিন কখনো একটি সুযোগের আশায় আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করে না। সূত্র: হারেটজ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন