সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট। দৈনিকটি তাকে ক্ষমতাপ্রিয়, আগ্রাসী ও উচ্চাভিলাষী বলেও অভিহিত করেছে। বিল ল’র লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়, বিন সালমান ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যে পাশবিক যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- শামস বিশ্বাস
আল সৌদ : রাজকীয় সৌদি আরব একটি শক্তিশালী ইসলামি রাষ্ট্র। বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান বিন ফয়সল আল সৌদ ১৯৩২ সালে এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। আল সৌদ পরিবার অনেক আগে থেকেই আরব জাহানে অনেক সম্মানিত পরিবার হিসেবে গণ্য ছিল। বিগত তিন শতাব্দী পর্যন্ত এই পরিবার আরব উপদ্বীপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান রাজকীয় সৌদি আরবকে তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র হিসেবে ধরা হয়। আর আল সৌদ পরিবারকে ঘিরেই সৌদি আরবের যাবতীয় ইতিহাস আবর্তিত হয়। আল সৌদ অর্থ ‘সৌদের পরিবার’। ১৮ শতকে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন সৌদের নাম থেকে এ নামটি এসেছে। বর্তমানে আল সৌদ পদবিটি মুহাম্মদ বিন সৌদ বা তার তিন ভাই ফারহান, সুনায়ান ও মিশারির বংশধরদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এই বংশের অন্যান্য কিছু শাখা রয়েছে। সৌদি রাজমুকুটের অধিকারী না হলেও এসব শাখা বংশের ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থাকতে পারে। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের পুত্র ও নাতিদের ক্ষেত্রে রাজকীয় পদবি ‘হিজ রয়াল হাইনেস’ ব্যবহৃত হয়। তবে অন্যান্য শাখা বংশের সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘হিজ হাইনেস’ ব্যবহৃত হয়।
রাষ্ট্র হলো নিজের : ১৯৪৩ সালে লাইফ ম্যাগাজিনের সম্পাদক নোয়েল এফ. বুশ সফর করেছিলেন সৌদি আরব। দেখা করেছিলেন দেশটির প্রথম বাদশাহ ইবন সৌদের সঙ্গে। ফিরে গিয়ে নিজের নিবন্ধে তিনি এমন এক শাসকের বর্ণনা দিয়েছেন, যার কাছে ‘রাষ্ট্র হলো নিজের’। এটা এমন সিস্টেম, যেটা সময়ে সময়ে হালনাগাদ বা আধুনিক করা হয়েছে বটে, কিন্তু এর মৌলিক ভিত্তি আগের অবস্থানেই গেছে।
রাজপরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদের উৎস সৌদি আরবে খুবই গোপন রাখা হয়। যদি তাদের সম্পদের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়, তাহলে ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ ধনীদের তালিকা অন্যরকম দেখাত। সাম্প্রতিক সৌদি সাংবাদিক ও একটি পত্রিকার সাবেক সম্পাদক জামাল ওয়াশিংটন পোস্টে এক মতামত কলামে লিখেছেনÑ ‘সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ও প্রিন্সরা বিলিয়নেয়ার হয় দুই উপায়ে। এক. সরকারি প্রকল্পে অর্থব্যয় অনেক বেশি দেখিয়ে। দুই. স্রেফ লুটপাট করে।’ তিনি তার সেই নিবন্ধে এমন একটি উদাহরণও দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শুধু একদল প্রিন্সের স্বার্থ রক্ষা করতে একটি বিমানবন্দর বানানো হয়েছিল ভুল স্থানে। ওই প্রিন্সরা ছিলেন জমির মালিক। তারা এটি সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে পেয়েছিলেন। এরপর আবার বিমানবন্দরের জন্য জমি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।
সৌদি শাসক পরিবারের সদস্য ও তাদের সমর্থক ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সরকারি নানা খরুচে প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিকে পাইয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন বিপুল অর্থের কমিশন। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, যেগুলো পরিশোধ কারার প্রয়োজন মনে করেননি। প্রিন্সরা তাদের ঋণ শোধ না করায় সৌদি ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংক এই শতকের শুরুর দিকে দেউলিয়া হয়ে পড়ছিল। এভাবে সৌদি শাসক পরিবারের সদস্য ও তাদের সমর্থক ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন। পঞ্চাশের দশকের আগেও দেশটির রাষ্ট্রীয় বাজেট আর শাসক পরিবারের বাজেটের মধ্যে কোনো তফাত রাখত না। তখন রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যয় নির্বাহ হতো রাষ্ট্রীয় তহাবিল থেকেই। গেল শতকের পঞ্চাশের দশকে বিষয়টি আলাদা করা হলেও রাষ্ট্র ও রাজপরিবারের মধ্যে কোনো স্পষ্ট বিভাজন রেখা আজও সৌদি আইনে নেই। দেশটির আইনে এমন কিছু নেই, যাকে রাজপরিবারের সদস্যদের ‘কনফিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধের বিধি-বিধান বলা যায়। অর্থাৎ কীভাবে রাজপরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রের সঙ্গে লেনদেন করবেন, তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়মনীতি নেই। ফলে রাজপরিবারের সদস্যরা আইনানুযায়ী নিজ পরিবারের নামে নামাঙ্কিত রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন না, তা-ও নয়। তাই ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত দেশটিতে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়িক চুক্তিগুলো যেন রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারস্যাপার।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অন্যদিক : মুহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও ক্ষমতাসীনদের ধরপাকড় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ শাসক পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি এবং বাড়াবাড়ি পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন সাধারণ অনেক সৌদি নাগরিক। কিন্তু যুবরাজের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপকে ভাবা হচ্ছে তার নিজের ও নিজ পরিবারের ক্ষমতা সুসংহত করার প্রচেষ্টা হিসেবে। এই পুরো অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকায় দেখা যায়, টার্গেট করা হচ্ছে সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ ও ফাহাদ এবং তাদের আরেক ভাই নায়েফের পরিবারকে। এর কারণ হতে পারে সৌদি বাদশা সালমানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর তৎপরতা। বছর দুই আগে ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক যুবরাজ জানিয়েছিলেন, বাদশা সালমানের ১১ ভাইয়ের মধ্যে আটজন বাদশার অপসারণের বিষয়ে একমত হন। তারা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ আহমদ বিন আবদুল আজিজকে ক্ষমতায় দেখতে আগ্রহী ছিলেন। এই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে দেশের প্রভাবশালী উলামাদের সম্মতি ছিল। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বাদশাহ সালমানের পরিবারের কেউই ধরা পড়ছেন না বা তাদের আয়-ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না। অথচ প্রশ্ন উঠছে না যুবরাজ তথা বাদশাহর নিজের পরিবারের কারও লেনদেন নিয়ে। যেমন, গত বছরও খোদ যুবরাজই ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে রাশিয়ান ভদকা টেকনোর ইউরি শিফার থেকে ইতালীয় নির্মিত এবং বারমুডা নিবন্ধিত বিশ্বের ১৫তম দীর্ঘ ইয়ট কেনেন বলে সংবাদ প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। তিনি এমন সময় এই ইয়ট কেনেন, যখন সৌদি সরকারের মিতব্যয়ী নীতির কারণে অনেক সাধারণ নাগরিক অসুবিধায় পড়েন। কিন্তু যুবরাজের এই বিলাসবহুল অর্থব্যয়ের কোনো ব্যাখ্যা প্রকাশ হয়নি। অর্থ কীভাবে তিনি পেলেন, তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। এটিও স্পষ্ট নয়, খোদ বাদশাহই বা কীভাবে নিজের দুটি অফশোর কোম্পানির অর্থ জুগিয়েছেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই নিজের লন্ডনের বাড়ির জন্য ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ ও একটি ইয়ট পরিচালনা করেন তিনি। সাম্প্রতিক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিআইজে (দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট) প্রকাশ করেছে প্যারাডাইজ পেপারস, যেখানে বাদশাহর পরিবারের একাধিক সদস্যের গোপন অফশোর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে প্রকাশ যে, বাদশাহর অন্যতম ছেলের প্রতিষ্ঠিত একটি বৃহৎ সৌদি বিনিয়োগ ব্যাংক, যেটির চেয়ারম্যান তার আরেক ছেলে, সেটি সরকারের সঙ্গে বিলাসবহুল কাজকর্ম করে। যেমন ফরাসি এক প্রতিরক্ষা কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণের প্রকল্প আছে তার। বাদশাহর আরেক ছেলের তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠান আছে, যেটি সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করে।
সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ : বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর সৌদি বাদশা হন তার সৎভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ। তরুণ বয়সে রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন সালমান। প্রায় ৫০ বছর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান সালমান। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মনোনীত হন ২০১২ সালে। ১৯৩৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেন সালমান। তিনি সৌদি আরবে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ বিন সৌদের ২৫তম সন্তান। তার মা হাসসা বিন আহমদ আল সৌদারির সাত সন্তানের অন্যতম সালমান। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের বাদশাহ হওয়ার পর আবদুল আজিজের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সে রিয়াদ প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন সালমান। তাকে রিয়াদের উন্নয়নের স্থপতি হিসেবে মনে করা হয়। ২০১১ সালে ভাই প্রিন্স সুলতানের মৃত্যুর পর সালমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ২০১২ সালে রাজপ্রাসাদে তার আগের উত্তরসূরি প্রিন্স নায়েফের মৃত্যুর পর তাকে পরবর্তী বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আবদুল্লাহর মতো সালমানকেও একজন মধ্যপন্থি শাসক বলা হয়ে থাকে সৌদি আরবে। ন্যায়পরায়ণতা হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কঠোর পরিশ্রমী, নিয়মানুবর্তী হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। তিনি তিনবার বিয়ে করেন। তিনি ১২ পুত্রসন্তানের জনক।
মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ : সৌদি আরবের যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়নবিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তার পিতা বাদশাহ সালমানের পরই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়, ২০১৭ সালের ২১ জুন মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার স্থলে মুহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ মনোনীত করা হয় একই সঙ্গে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নায়েফকে তার সব পদ থেকে অপসারণ করে তার সব ক্ষমতা মুহাম্মদ বিন সালমানকে দেওয়া হয়। যুবরাজ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুহাম্মদ বিন সালমানের এই ‘উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন।’
উত্থান : সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর হওয়ার আগে সৌদি আরবের বাইরে কম মানুষ মুহাম্মদ বিন সালমানের নাম জানতেন। ২০১৫ সালে তার বাবা বাদশাহ হন, তখন থেকে তার নাম আলোচনায় আসতে থাকে। ৩১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি সৌদি আরবের ভেতরে হয়ে ওঠেন প্রবল ক্ষমতাধর। মুহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স পদে আসীন করেন তার বাবা এবং সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান। এ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুহাম্মদ বিন সালমানের চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন নায়েফকে। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে যিনি আসীন হন, পরবর্তী সময়ে তিনিই হবেন সৌদি আরবের বাদশাহ। বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। তৎকালীন সৌদি প্রিন্স (বর্তমানে বাদশাহ) সালমান বিন আবদুল আজিজের তৃতীয় স্ত্রীর বড় সন্তান হচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে মুহাম্মদ বিন সালমানকে তার বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে মুহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। তখন তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় ক্রাউন প্রিন্স কোর্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক
ব্যক্তি!
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট। দৈনিকটি তাকে ক্ষমতাপ্রিয়, আগ্রাসী ও উচ্চাভিলাষী বলেও অভিহিত করেছে। বিল ল’র লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়, বিন সালমান ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যে পাশবিক যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি এই সৌদি প্রিন্সকে ক্ষমতাপ্রেমিক বলেও উল্লেখ করেন। বিল লেখেন, সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার এখন তার আঞ্চলিক শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় নাইট বা উচ্চাভিলাষী যুদ্ধবাজদের মতোই বিপজ্জনক তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি, যে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ার জন্য দৃশ্যত খুব তাড়াহুড়া করছেন। সমালোচকরা বলছেন, প্রিন্স (ডেপুটি যুবরাজ) সালমান অনেক অর্থ-সম্পদ জমিয়েছেন; কিন্তু অর্থ নয়, ক্ষমতাই তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তার বাবা সালমান যখন সৌদি সিংহাসনে বসেন, তখনই তিনি অসুস্থ। তাই পুত্রের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে বাধ্য হন তিনি। স্মৃতিবিভ্রাটসহ নানা ধরনের মানসিক রোগের শিকার রাজা সালমান দিনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। তাই বাবার প্রহরী এই পুত্র তথা বিন সালমানই হচ্ছেন সৌদি আরবের প্রকৃত রাজা।
বিতর্ক
২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হজ পদদলনের ঘটনায় দুই হাজার হাজি নিহত হন। সূত্র দাবি করে যে, এই ভিড়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেই জোর করে ব্যক্তিগতভাবে কাফেলায় প্রবেশের চেষ্টার পাশাপাশি এলাকায় বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ ছিল। লেবাননভিত্তিক আরবি দৈনিক আদ-দিয়ার একটি রিপোর্টে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের গাড়িবহরের আগমন দায়ী করেছে। ২০১১ সালের শুরুতে জনপ্রিয় শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদ-ের জন্য প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ইরানের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন। ইরানের শিয়া জনগোষ্ঠী তেহরানে সৌদি আরব দূতাবাসে আগুন দিয়েছে তারপর থেকে, দুই দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এই মৃত্যুদ-ে ৪৬ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়, বেশিরভাগই সুন্নি বা জিহাদবিরোধী। কথিত আছে যে, তিনিও উপভোগ্য জীবনধারার অধিকারী। ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরুর পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। যদিও দুই বছর ধরে চলা এই লড়াইয়ে অগ্রগতি খুব কমই হয়েছে। বরং সৌদি আরব ও মিত্র জোটের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবং আরববিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোয় মানব সংকট তৈরির জন্যও তাদের দায়ী করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন