১০০% মুসলমানের দেশ মালদ্বীপের বিশেষত্ব হলো দেশটিতে মহিলা পুলিশ অফিসারের হার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্চোচ্চ। নয়া দিল্লি ভিত্তিক ‘কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ’ (সিএইচআরআই)-এর ‘সমতার অমসৃণ পথ: পুলিশ বাহিনীতে নারী’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায় মালদ্বীপ পুলিশে নারী সংখ্যা ৭.৪ শতাংশ। এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে এই হার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।
পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থা ভালো হলেও ততটা নয়। সেখানেও নারী প্রতিনিধিত্ব অপর্যাপ্ত। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে দেখা যায় শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েলস উজ্জ্বল অবস্থানে রয়েছে। সেখানে পুলিশ বাহিনীতে জনবলের ২৮.৬% নারী। যুক্তরাষ্ট্র এর অনেক পেছনে, মাত্র ১২%।
আরো নারী সদস্য চাই
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ হারের নারী সদস্যের অধিকারী হওয়ার পরও মালদ্বীপের পুলিশ বাহিনী মনে করে তাদের আরো বেশি সংখ্যক নারী সদস্য প্রয়োজন। রাজধানী মালেতে পোস্টিং পাওয়া মালদ্বীপ পুলিশের মহিলা চিফ ইন্সপেক্টর অব পুলিশ আমিনাথ সুজি বলেন, ‘আমরা আরো বেশি সংখ্যক নারীকে পুলিশ বিভাগে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।’
তিনি বলেন, তবে, ‘অনেক পুরুষের চেয়ে মেয়েরা অধিক যোগ্য হওয়ার পরও তাদের পুলিশে যোগ না দেয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণ। পাশাপাশি তারা বাড়িতে থেকে পরিবারের দেখাশুনা করতেই বেশি আগ্রহী। এছাড়া পুরুষপ্রধান পুলিশ বাহিনীতে পুরুষ সদস্যদের প্রতি আনুকূল্য দেখানো হয় বলে বিভ্রান্তিও রয়েছে তাদের মধ্যে।’
অবশ্য এসব ভীতি দূর করতে মালদ্বীপ পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমিনাথ উল্লেখ করেন।
আমিনাথের এক মহিলা কলিগ, চিফ ইন্সপেক্টর ইজমিয়া জহির পুলিশে যোগ দেয়ার আগে ছিলেন একজন রিসার্চ স্কলার। তবে তার গষেণাকর্ম তাকে পুলিশ বিভাগে সামনের সারিতে আসন করে দিতে সহায়ক হয়ছে। তিনি তার মাস্টার্স ডিগ্রি করার সময় পুলিশ বিভাগের ওপর একটি থিসিস করার উদ্যোগ নেন। তখন পুলিশ বিভাগ থেকে বলা হলো জহির যদি পুলিশে যোগ দেয় তবেই তাকে বিভিন্ন তথ্যে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে।
উদ্ভাবনী মেধার অধিকারী আমানাথ মনে করেন, শুধু ক্লাসরুম নয়, আরো অনেক উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করা যেতে পারে।
বিশ্বে সর্বোত্তম
মালদ্বীপ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. মাইকেল কেনেডি। তিনি মালদ্বীপ পুলিশের নারী সদস্যদের ব্যাপারে যারপরনাই মুগ্ধ।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে নারী পুলিশ অফিসারদের ক্ষেত্রে মানের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমি এযাবত যত পুলিশের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের মধ্যে এরা সবেচেয়ে ভালো। মালদ্বীপে পুলিশের জন্য একটি ব্যাচেলর কোর্স করাই আমি। এই কোর্সে এ পর্যন্ত কোন নারী পুলিশ কর্মকর্তা ফেল করেনি। শুধু এই অ ল নয় গোটা দুনিয়ার মধ্যে এরা সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ অফিসার।’
আমানাথ ও ইজমিয়ার মতো নারী পুলিশ অফিসাররা শুধু নিজ দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাদের দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়া রিজিয়ন ল এনফোর্সমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’ এবং বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম ‘এশিয়া রিজিয়ন উইমেন পুলিশ কনফারেন্সে’ও অংশ নেন তারা।
print
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন