দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামগ্রিক অর্থনীতির সংকটের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। সংকট উত্তরণে সবচেয়ে বেশি জরুরি আর্থিক খাতের দুরবস্থা কাটানো এবং অর্থনীতির আকারের অনুপাতে রাজস্ব আয় বাড়ানো। কেননা অর্থনীতির মূল সংবেদনশীল জায়গা আর্থিক খাত এখন সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত।
তাদের মতে, রাজস্ব-স্বল্পতার কারণে সরকারের ঋণ গ্রহণ অনেক বেড়ে পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষার মতো জনকল্যাণমূলক খাতে সরকার বেশি ব্যয় করতে পারছে না। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রাজস্ব ও আর্থিক খাতে সাহসী সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে এবং এর জন্য দরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব আয়োজিত ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি। সমাপনী বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
আলোচনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। অর্থনীতির সবচেয়ে সংবেদনশীল আর্থিক খাত এখন নিয়ন্ত্রণহীন ও অরক্ষিত অবস্থায় চলে গেছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক খাত ঝুঁকিতে পড়েছে। বিভিন্ন অনুগত স্বার্থগোষ্ঠীকে ব্যাংক থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে, বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সৎ উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হন।
পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আর্থিক খাতসহ কিছু সংবেদনশীল খাতকে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে গেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয়, তখন সে ভয়ংকর হতে পারে। অর্থনীতিকে নৈতিকতার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতি সব দেশে আছে। তবে যে কোনো সরকারি সেবা নিতে গেলে যেভাবে বাড়তি টাকা দিতে হয়, তা অন্যান্য দেশে খুব একটা দেখা যায় না। আবার সেবাগ্রহীতা রাজস্ব ফাঁকিসহ বিভিন্ন অন্যায় সুযোগ নেয়।
তিনি বলেন, অর্থনীতির ভালো সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। আবার প্রশাসনের সর্বস্তরে জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি ব্যয়ে ব্যাপক অপচয় হয়েছে। অবাধে কালো টাকার সঞ্চালন ও বিদেশে পুঁজি পাচার হচ্ছে। অর্থনীতির সূচকগুলো যতদিন ভালো ছিল, ততদিন এসব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অপচয়ের বোঝা ঢাকা পড়ে ছিল। এসব হজম করার শক্তিও অর্থনীতিতে ছিল। এখন সে অবস্থা নেই। ফলে সংকট উত্তরণে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পথনির্দেশনার প্রয়োজন আছে। তিনি বড় বড় প্রকল্পের বিপরীতে কোন কোন দেশ থেকে ঋণ এসেছে, তা নিয়ে সাংবাদিকদের অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে গেড়ে বসে। ক্রেতারা যদি মনে করে, দর বাড়বে, তাহলে ব্যবসায়ীরাও দর বাড়াতে থাকে। অব্যাহত উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। পরোক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একে বাঘের দুর্বল হরিণ শিকারের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, সাবেক আইজিপির শত শত কোটি টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। আবার রাতারাতি তা উত্তোলন হয়েছে। ব্যাংকগুলোর তো এ ধরনের সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউকে জানানোর কথা। কোথা থেকে টাকা এসেছে এবং কোথায় জমা হয়েছে, তার পদচিহ্নের দিকে কেন তাকানো হচ্ছে না?
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। প্রশ্ন হলো, সরকারের উচ্চতম পর্যায় থেকে সে ধরনের অঙ্গীকার কী আছে। অর্থনৈতিক বড় দুর্বলতা সত্ত্বেও কার্যকর সংস্কারে অবহেলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ক্রমাগতভাবে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এবারের ঘাটতি মেটাতে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে, আগে নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত সুদের পরিমাণ তার অর্ধেক। ফলে বাজেটও যে একটা ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে, তার সংকেত দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ভুল নীতির কারণে মৌলিক অনেক দুর্বলতা সামনে এসেছে। অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ, সর্বব্যাপী দুর্নীতি, অনিয়ম, অপচয় ও জবাবহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা, রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা, রাজস্ব আয় হ্রাস এবং কালো টাকা তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতির অবস্থা হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মতো এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাজেট করতে হয়েছে। মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন না আনলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চ সুদে একের পর এক ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের ওপর নির্ভর করে এভাবে অর্থনীতি চলতে থাকলে একসময় দেউলিয়া না হলেও বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ মডেলই এখন দেশের জন্য বিজনেস মডেল হয়ে গেছে। আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, আর ফেরত দেবেন না। এই মডেল চলছে।’ তাঁর মতে, চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেট দেওয়া হলেও কোনো নতুনত্ব নেই। আগের বাজেটের অঙ্ক শুধু এদিক-সেদিক করা হয়েছে। বাজেটের নীতি-কৌশল ও দর্শনে বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে সংকোচনমূলক বাজেট। অথচ বাজেটের ঘাটতি তো সংকোচনমূলক মনে হয় না। আবার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। সরকার যদি বেশি ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাত কীভাবে ঋণ পাবে। আর ব্যক্তি খাত ঋণ না পেলে কর্মসংস্থান হবে কীভাবে? এ অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত।
সাবেক গভর্নর আরও বলেন, বাজেট করতে হবে পারফরম্যান্স নির্ভর। দরকার হলে কিছু সংস্থা বন্ধ করে দিতে হবে, কিছু সংস্থার জনবল কমাতে হবে। শুধু বাজেটের অঙ্ক এদিক-সেদিক করে কোনো লাভ নেই। কঠিন সময় থেকে উত্তরণের জন্য কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। সূর্যের আলোর মতো স্বচ্ছ হতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে গেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে কেবল আইএমএফের ফর্মুলা মেনে সুদহার, ডলারের দর বৃদ্ধি ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে হবে না। বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সরবরাহ বাড়াতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে তিন পক্ষের আশার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। আইএমএফ, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা ফুলেফেঁপে ওঠা গোষ্ঠী এবং আমলাতন্ত্রকে খুশি করা হয়েছে। তবে পরিশ্রমী উদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক কর্মী তথা সাধারণ মানুষের কথা শোনা হয়নি। যদিও বাজেটে কিছু কাগুজে ভালো কথা আছে।
হোসেন জিল্লুর বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব গত বছর পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকট স্বীকারই করেনি। ধাক্কা খাওয়ার পর এখন কিছুটা সমস্যার কথা বলছে। বেশির ভাগ দেশ যখন সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, আমরা নয়ছয় সীমা আরোপ করে রেখেছি। এর মাধ্যমে তো বিনিয়োগ বাড়েনি। তাঁর মতে, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সার্বিকভাবে নৈতিকতার ব্যাপক অধঃপতন হয়েছে। নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সংকট আরও গভীর হবে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দরিদ্রদের পাশাপাশি এখন নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরাও মূল্যস্ফীতির সংকটে আছে। বাজেটে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য যে কর্মকৌশল লাগে, তা কোথায়? কর্মসংস্থানের সংকটে থাকা যুবকদের জন্য বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। মোবাইলে কথা বলার ওপর এবং মোটরসাইকেলে নতুন করে কর বাড়ানো হয়েছে। সৎকরদাতাদের সর্বোচ্চ স্তরে ৩০ শতাংশ কর প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ কালো টাকার মালিকরা ১৫ শতাংশ দিয়ে সাদা করতে পারবেন, যা সৎকরদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ব্যাংক খাত ধ্বংস করা হয়েছে। কেন এ অবস্থা হলো, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। রাজস্ব ও আর্থিক খাত সংস্কারের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বছরে যদি ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আমানত বাড়ে, তাহলে বেসরকারি খাত ঋণ নেবে কীভাবে। তিনি বলেন, রাজস্ব আয়ের বড় অংশই প্রশাসনিক ব্যয়, যা কমাতে হবে। দেশে এত মন্ত্রণালয়ের কোনো দরকার আছে? বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকার এখন তাদের সঙ্গে বসে কিছু সংশোধন করতে পারে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো বাজেটের বিষয় নয়। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য গত মাসে সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। দেরিতে হলেও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছে। বাজেট মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক অবস্থান ঘোষণা করেছে, যা ইতিবাচক। সুদের হার আবার বেঁধে না দিলে এবং টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতি আগামী ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে কমতে পারে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, নীতির ভ্রান্তি ও দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি এ পর্যায়ে এসেছে। অন্যান্য দেশ সুদহার বাড়ালেও বাংলাদেশে নয়ছয় করে রাখা হয়। যখন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় ছিল, তখন সংস্কার করা হয়নি। তাঁর মতে, এবারের বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর চেয়ে পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। এতে দরিদ্রদের পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। এবারের বাজেট সুবিধাবাদীদের বাজেট। দুর্নীতিবাজদের সুবিধা দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষমতা অর্থনীতিতে কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এখানে কিছু অবশিষ্ট নেই। অনেকে এখন আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছে না।
সাবেক অর্থ সচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, রাজস্ব আয়ের বেশির ভাগ পরোক্ষ কর, যা ধনী-দরিদ্র সবার ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য হয়। ফলে দরিদ্ররা চাপে পড়ে। এটি না করে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। ব্যাংক খাতে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। তবে অবলোপন, পুনঃতপশিল, আদালতে বিচারাধীন যোগ করলে খেলাপি ঋণ পাঁচ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এদিকে নজর দিতে হবে।
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি বলেন, সৎভাবে আয় করে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। আর কালোবাজারি ও অবৈধ টাকার মালিকরা দেবে ১৫ শতাংশ। এটা হতে পারে না। তিনি একজন সংসদ সদস্য এবং এ রকম তুঘলকি কাণ্ডের সমর্থন জানানোর জন্য জনগণ ম্যান্ডেট দেয়নি। এ সুযোগ বাতিলের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে সংসদে তুলবেন।
এ. কে. আজাদ বলেন, ৩৮ লাখ টাকার বেশি আয় হলে এতদিন ২৫ শতাংশ কর দিতে হতো। এবার দিতে হবে ৩০ শতাংশ। আর ব্যাংক ঋণের টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে যারা বিদেশে নিয়ে কানাডা-মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনলেন এবং এখন যদি ফেরত আনেন, তাদের কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ। কোনোভাবেই এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, কৃষক ঠিকমতো খাজনা দেন। অথচ উৎপাদিত ফসল বাজারে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে টাকা আদায় করে। বাজারে বিক্রির সময় আবার খাজনা দিতে হয়। কৃষক মাফ পান না। মাফ পান তিনি, যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে শোধ করেন না।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বেশি। তাহলে দেশে কর্মসংস্থান হবে কীভাবে? বাজেটে রাজস্ব আয়ের একটি উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেখান থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মাঝেমধ্যে জনসমক্ষে বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এবং এখনকার জনবল দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলাম এমপি বলেন, ছাপা সংবাদপত্র শিল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অনলাইনের কারণে বিজ্ঞাপনের বড় অংশ সেখানে চলে যাচ্ছে। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন