সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলারেল আজিজ এবং তার পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্র ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারা অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে পৃথক পৃথক বক্তব্য রেখেছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে। এই সমস্ত উত্তরগুলোতে তারা জেনারেল আজিজের এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোন রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেননি৷ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করেননি আওয়ামী লীগের কোন শীর্ষ নেতা।
২০২১ সালে যখন র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, সেই সময় আওয়ামী লীগ তীব্রভাবে তার প্রতিবাদ করেছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিল। কিন্তু এবার সরকার অত্যন্ত নির্লিপ্ত।
সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে সরকার আগ বাড়াবে না, মাথা ঘামাবে না। এটা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কাজেই এটি ওই ব্যক্তির বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে জেনারেল আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিষয়টি এরকম নয়, এর আগেও বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর বিভিন্ন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা নিয়মিতভাবে আরোপ করে থাকে। এটি
একজন ব্যক্তির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বলেই সরকার মনে করছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে অবস্থান গ্রহণ করবে না। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে সরকার তদন্ত করবে কিনা সে ব্যাপারেও তারা নির্লিপ্ত।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। উল্লেখ্য, জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তিনটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো সামরিক কেনাকাটায় দুর্নীতি এবং তার ভাইদেরকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে সরকার কোন তদন্ত করবে কি না এ রকম প্রশ্নের উত্তরে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়নি।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, জেনারেল আজিজের ব্যাপারে সরকার একটা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করবে। একদিকে যেমন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক আহবান জানাবে না, অন্যদিকে জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে তদন্তের ক্ষেত্রেও কোন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। সরকার জেনারেল আজিজের ব্যাপারে কোন দায় গ্রহণ করবে না বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধু আজিজ নয়, দুর্নীতির দায়ে যদি অন্য কোন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বা অন্য কোন শাস্তি যেমন ব্যাংক জব্দ বা নানা রকম ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে সরকার তার দায় দায়িত্ব নেবে না। আর এ কারণে জেনারেল আজিজের ব্যাপারটিতে সরকার এখন উপেক্ষার নীতি গ্রহণ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন