অসাধু বন কর্মকর্তা ও মাছ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, আইনের ফাঁকফোকর, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, মৌয়ালদের অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বার বার ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এসব অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালাসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম। এতে তিলে তিলে নিঃশ্বেষ হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে আগলে রাখা এই ম্যানগ্রোভ বন।
সুন্দরবনে বার বার লাগা আগুনে পুড়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালাসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম। এতে তিলে তিলে নিঃশ্বেষ হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে আগলে রাখা এই বন।
দুই যুগের এসব আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০০ একর বনভূমি। ক্ষতির মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণীর বিচরণ কেন্দ্র ও আবাসস্থল। একবার বা দুইবার নয়। গত দুই যুগে এমন ২৫টি অগ্নিকাণ্ড দেখেছে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগ। প্রতিবারই আগুন লাগলে তদন্ত কমিটি গঠন হয়, আসে সুপারিশও। তবে সেগুলো খুব একটা আলোর মুখ দেখে না। ফলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বছরের পর বছর।
কেন এতবার আগুনের ঘটনা এই বনে?
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, জেলে-মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে অন্তত ১৫ বার। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দাবদাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৪ বার, মাছ ধরার জন্য ৪ বার, আক্রোশবশত অগ্নিসংযোগের আশঙ্কার উল্লেখ রয়েছে ৪ বার। তবে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, বন বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে ইচ্ছাকৃতভাবে গহিন বনে আগুন ধরিয়ে দেয় অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা। পরে বর্ষা মৌসুমে এসব স্থান প্লাবিত হলে নেট জাল দিয়ে সহজেই লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫-২৬ বার আগুন লেগে শত একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মকর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ এড়াতে পারে না।
এদিকে চাদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নজরে আসার ৩য় দিন দুপুরের কিছুক্ষণ আগে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাইজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বনে পাতার অনেক মোটা স্তর রয়েছে। এসব স্তরের নিচে নিচে আগুন থাকতে পারে। তাই, আরও দুই দিন পানি ছিটানো হবে।
গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের মধ্য আমোরবুনিয়া সুন্দরবনের অংশে স্থানীয় লোকজন আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। এরপর থেকে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরসি) সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ আগুন নেভানোর কাজ করেছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের অনেক নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে। নদী-খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা জরুরি। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বনের মধ্যে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধের বিষয়েও বন বিভাগ কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় ভবিষ্যতে যাতে আর আগুন না লাগে সেজন্য ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী ও দুটি খাল আগামী বছর খনন করা হবে। তাহলে ওই এলাকাগুলোতে জোয়ারের পানি উঠতে পারবে। এছাড়া বন বিভাগের অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী বৃদ্ধি এবং স্থানীয়দের সচেতন করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন