সবকিছু পুইড়া যাকগা আমার মা তো আছে। মানুষ থাকলে কামাই করন যাইবো’ জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক শিশুর এমন আবগঘন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়। সম্প্রতি কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার পর আলোচনায় আসে শিশুটি।
মাকে নিয়ে শিশুটির আবেগঘন কথা নেটিজেনের মনে নাড়া দিয়েছে তবে সেই জান্নাতের মায়ের সংগ্রামের গল্পটা আড়ালেই রয়ে গেছে। শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের মায়ের নাম শিল্পী বেগম। ২০০২ সালে কুমিল্লার শিপন মিয়ার সঙ্গে পরিবারের ইচ্ছেতে ঘর বাঁধেন শিল্পী। তার বছর খানেক পর ঘর আলো করে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান শাহাদাৎ হোসেন। শ্বশুরবাড়িতে অর্থনৈতিক সংকট থাকায় কয়েকবছর পর থেকে লেগে থাকতো হট্টগোল।
দ্বিতীয় সন্তান না নিতে চাইলেও স্বামী শিপন মিয়ার জোরাজোড়িতে সন্তান নিতে বাধ্য হন শিল্পী। এরপর জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্মের পর সেই সংকট বহুগুণে বেড়ে যায় মা শিল্পীর জীবনে। কিছু অভ্যন্তরীন ঝামেলা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় জান্নাতের মা শিল্পী বেগমের।
সন্তানদের ভরণ-পোষণ স্বামীর থেকে না পেলেও নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানকে বড় করছেন এই নারী। সাত হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের বাসায় কাজ করা আয় দিয়ে চলে সংসার। তার সঙ্গে থাই গ্লাসের দোকানে কাজ করে ছয় হাজার টাকা দেয় ছেলে শাহাদাৎ।
শিল্পী বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, খুব করে টিকাতে চাইসিলাম সংসারটাকে। স্বামীর বাজে চরিত্র থাকায় আর পারিনি। খুব কষ্টে মেয়ে আর ছেলেটাকে নিয়ে জীবন চালাচ্ছি। এর মধ্যে আগুনে সব কেড়ে নিলো। জানতাম না বেঁচে ফিরবো কি-না। দুই সন্তানের দিকে চেয়ে এখনও এই কড়াইল বস্তিতেই রয়ে গেছি।
মেয়ের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে শিল্পী বলেন, আমার মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসে। তার কথাগুলো শুনে আমিও কান্না করে দিয়েছি। আমার স্বপ্ন এই মেয়াটাকে যেনো মানুষ করতে পারি।
পরামর্শচাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য ডিবি প্রধানের ৪ পরামর্শ
সকলের সহযোগিতা পেলে মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চান এই মা। মেয়ে জান্নাত বর্তমানে মহাখালী মডেল আব্দুল হামিদ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।
মায়ের এমন সংসার চালানো নিয়ে মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলে, আমার মা কষ্ট করে আমাদের বড় করছে, দুনিয়ার আলো দেখাইসে। আমার মা আমার সব। মার কষ্ট দেইখা খারাপ লাগে কিছু করনের নাই। একদিন মার কষ্ট থামাইতে চাই।
২৪ মার্চ (রবিবার) রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে দুইশর বেশি ঘর পুড়ে যায়, এ ছাড়া আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে শতাধিক ঘর ভেঙে ফেলা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন