আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাজেটের আকার বাড়ছে। প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আসছে অর্থবছরের জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি হ্রাস, রাজস্ব আয় বাড়ানো, রিজার্ভ সংকটের উত্তরণ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের খসড়া রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। কাউন্সিলের আরও কয়েকটি বৈঠকের পর আগামী এপ্রিল মাসের শুরুতে বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হতে পারে। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য যে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে এখন কাজ করছে অর্থ বিভাগ।
জানা গেছে, আগামী মেয়াদেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাজেটের আকার বাড়ানো এবং সেটি বাস্তবায়নের গতিও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে সর্বাধিক জোর দেওয়া হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেন দ্রব্যমূল্য কমে আসে।
কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের
চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার প্রমুখ অংশ নেন।
সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী অর্থবছরের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি হবে আগামী সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের জন্য প্রথম ও সম্পূর্ণ নতুন বাজেট। মূল্যস্ফীতি, ভর্তুকি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য বেশ বড় আকারের বাজেট দিতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যার আকার ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। তদুপরি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত পূরণে ইতোমধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে অর্থনীতিতে।
কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে দেশে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারি ঋণগ্রহণের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ নানা কারণে সংকটের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির বেশকিছু প্রধান সূচকে রয়েছে নেতিবাচক প্রবণতা। ঠিক এমন সময় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধ ও আগুন সন্ত্রাসের কারণে অর্থনীতিতে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তাই সব মিলিয়ে বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা অর্জন করা বেশ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাস্তবতার নিরিখে এ বছরের বাজেটে বেশকিছু সূচকে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতির বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে উল্লিখিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা আছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কমার তেমন লক্ষণ নেই। তাই চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে তা সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে সরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন