মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস বাড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। পরিবারের আকুতি সত্ত্বেও তালিকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বই স্থান পায়নি; বরং তালিকাভুক্ত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী লেখকের একাধিক বই।
আর বাছাই কমিটিতে থাকা বিশেষজ্ঞরা নিজেরাই তালিকাভুক্ত করেছেন নিজেদের বই। শর্তপূরণ করে বই জমা দিয়ে স্বনামধন্য প্রকাশনী বাদ গেলেও ভিন্ন নাম দিয়ে তালিকায় বারবার জায়গা পেয়েছে একই প্রকাশনী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী লেখকের বই পড়ে বিভ্রান্ত হতে পারে নতুন প্রজন্ম; এতে ভেস্তে যাবে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে ২০১০ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে বই তালিকাভুক্তির নীতিমালার ১৭ নম্বর ধারায় স্বাধীনতাবিরোধী কোনো লেখকের বই কেনা যাবে না বলে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ লেখক নাসির আলীর 'বীরবলের খোশগল্প' ও 'লেবু মামার সপ্তকাণ্ড' নামে দুটি বই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমির চরিতাবিধান বলছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নাসির আলী অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আর ১৯৬৭ সালে তৎকালীন রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলেন এ নাসির আলী।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যারা বাঙালি সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরোধী, তাদের কাছ থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।’
২০১৬ সালের মতো এ প্রকল্পের বইয়ের তালিকায় এবারও স্থান পায়নি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন বই। এ বিষয়ে কবি পরিবারের দাবি উপেক্ষিত হলেও বাছাই কমিটিতে থাকা কবি নূরুল হুদা ও সেলিনা হোসেন নিজেরাই নিজেদের বই তালিকাভুক্ত করেছেন। যদিও বাছাই কমিটিতে থাকা লেখকদের বই তালিকাভুক্ত হওয়া সমীচীন নয় বলে মত শিক্ষা প্রকল্প বিশেষজ্ঞদের।
কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী সময় সংবাদকে ফোনে বলেন, ‘বাংলা ভাষার এত বড় একজন কবি, আমরা বাঙালি হিসেবে বলতেও লজ্জা লাগে যে, সে তালিকায় তার বই রাখা হচ্ছে না। অথচ জীবনে তিনি কী না করেছেন বাঙালির জন্য! সেখানে তার বই নেবে না! যাদের বই পড়ার মতো না; তাদের বই সেখানে স্থান পেয়েছে।’
জাতীয় কবির বই রাখা নিয়ে ড. মেসবাহ কামাল আরও বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তার লেখা বই রাখতে কেন স্বজনদের আকুতি জানাতে হবে? এটা তো আমার মাথায় কাজ করছে না। সেই আকুতি আবার বিফলেও যায়, এ কেমন বাংলাদেশ!’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, নীতিমালার মধ্যে একটা পয়েন্ট থাকার দরকার ছিল; কমিটির কেউ নিজের এবং তার আত্মীয় স্বজনের বইয়ের সুপারিশ করতে পারবেন না।’
একাধিক প্রকাশনী ভিন্ন নামে নামসর্বস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুলে বই তালিকাভুক্ত করিয়েছেন। এজন্য রিট করেছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, রিটটা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, অনেকের মত বইগুলো যেভাবে বাছাই করা হয়েছে সে প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ ছিল না।
স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া তালিকা অনুসারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন তারা। বই তালিকাভুক্তি বা বাদ দেয়ার এখতিয়ার নেই তাদের।
বেলাল হোসাইন আরও বলেন, ‘সিলেকশন কমিটি যা সিলেক্ট করেছে, আমরা তাই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে কোনো বইয়ের নাম ঢোকানো বা বের করার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
নীতিমালা অনুযায়ী অনুবাদ ছাড়া কোনো বিদেশি বই তালিকাভুক্ত করার বিধান না থাকলেও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, মূল্য ও বইয়ের আকার উল্লেখ না করেই একাধিক ইংরেজি বই তালিকাভুক্ত হয়েছে। সূত্র: সময় টিভি অনলাইন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন