ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁও উপজেলায় গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা ৬৫০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে নান্দাইলে ৫০০ জন এবং গফরগাঁওয়ে ১৫০ জনের হাতে কম্বল তুলে দেন তাঁরা।
গতকাল সকালে নান্দাইলের আচারগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব শিবনগর গ্রামে ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিবিসির জরিপে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে স্থান পাওয়া পূর্ব শিবনগর গ্রামের শুভসংঘের সদস্য সানজিদা ইসলাম ছোঁয়াসহ অন্য সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে মায়ের সঙ্গে কম্বল নিতে আসে মাইমুনা (৭) নামের এক শিশু। ভিড়ের মধ্যে কম্বল পেয়ে মাইমুনা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আনন্দে সে বলে ওঠে ‘আম্মা, কম্বলডার খুব ভালা গন্ধ। এইডা আমার লাইগ্যা? তা অইলে তো অহন শীত করতো না।’
মেয়ের খুশিতে মা আছিয়া বেগম আবেগাপ্লুুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘শীতে ছেড়িডা খালি কানতো, আর কইতো, একটা কম্বল দেওনের লাইগ্গা। আইজ না কাইল দেয়াম কইয়া খালি ঘুরাইছি। অহন কম্বলডাতে ছেড়িডা উম (গরম) পাইবো।’
ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রাম থেকে আসা জামেনা বেগম নামের অশীতিপর এক বৃদ্ধা বলেন, ‘শীতে রাইতে ঘুমাইতাম পারি না। এরে হেরে কইতাম, একটা কম্বলের ব্যবস্থা কইর্যা দিতো। কেউ কথা হুনে নাই। অহন তারা (বসুন্ধরা) ভালা রঙের একটা কম্বল দিছে। এই কম্বলডা দিয়াই বাহি শীতটা পার করবাম।’
পূর্ব শিবনগর গ্রামে কম্বল বিতরণের পর নান্দাইল সদরের সমূর্তজাহান মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে ৩০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।
রাকিব নামের শারীরিক প্রতিবন্ধী হুইলচেয়ারে করে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে আসে। সে কম্বল পেয়ে বলে, ‘আমার এই চেয়ারডাও বসুন্ধরা দিছে। এইডা দিয়াই এইনো হেইনো যাইতাম পারি। তা ছাড়া করোনার মধ্যেও চাউল, ডাইল, চিনি দিছে। অহন আবার কম্বল।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল, পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা জুয়েল, কমিশনার খাইরুজ্জামান মানিক, সমূর্তজাহান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ যতিস চন্দ্র সাহা রায়সহ শুভসংঘের সদস্যরা।
নান্দাইল পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি বসুন্ধরার এসব কাজে অভিভূত। তাদের এই মানবিক কাজগুলো উদাহরণ হয়ে থাকবে। অসহায়দের পাশে সবাইকে বসুন্ধরার মতো এগিয়ে আসা দরকার।’
নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘এর আগে বেশ কয়েকবার বসুন্ধরা গ্রুপ উপজেলায় শুভসংঘের মাধ্যমে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে। প্রতিবছরই তারা কম্বলসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী দেয়। আমি বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।’
এরপর বিকেলে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলো মাঠে ১৫০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শুভসংঘের প্রধান উপদেষ্টা ডা. কে এম এহসান, সভাপতি আব্দুল হামিদ বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ ফারুকী, কোষাধ্যক্ষ অনিল রায় প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন