নওগাঁর সাঈদ হোসেন। ছিলেন ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অফিস সহায়ক (পিয়ন)। ২০২০ সালে দেশে করোনা মাহামারি শুরু হলে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে করোনার জাল সনদ বিক্রির দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে যান কারাগারে। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি নওগাঁর হোগল বাড়িতে ফিরে বনে গেছেন চিকিৎসক।
সব রোগের ‘চিকিৎসা জানা আছে’ সাঈদের। তাই কাউকে ফেরান না। নামের আগে পদবিও লিখছেন, ‘ডাক্তার’। রোগীদের ওষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
সেই ব্যবস্থাপত্রে নিজের নামের পাশে ডিগ্রি হিসেবে লিখেছেন, ‘ডিএমএফ’, নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার।
কোত্থেকে এই ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রি নিয়েছেন, এর মানে কী, কারা এই ডিগ্রি নেন, তার সনদ বা রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বর কী, তার কোনো কিছুই দেখাতে পারেননি সাঈদ।
এই ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের একটি ডিগ্রি। তবে যে কেউ এটি করতে পারেন এমন নয়। বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে এই কোর্সে ভর্তি হতে হয়।
চার বছরের এই ডিগ্রি শেষ করে সদনধারীদের কমিউনিটির ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে গ্রামে-গঞ্জে থাকতে হবে। শহরে থাকতে পারবেন না।
আবার হাইকোর্টের একটি রায় অনুযায়ী বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখতে পারবেন না।
চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেয় যে সংস্থা, সেই বিএমডিসির আইনেও নিবন্ধনভুক্ত মেডিক্যাল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
তবে সাঈদ থাকেন শহরে। নওগাঁর সদর উপজেলার হোগল বাড়ি মোড়ে ভাই ভাই মেডিকেয়ার ফার্মেসিতে বসেন। রোগী দেখেন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
পরিচিতজনদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে, সাঈদ হোসেনের মা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। মায়ের অনুরোধে সাঈদকে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিওনের চাকরি পাইয়ে দেন সেই চিকিৎসক।
করোনা শুরু হওয়ার পর সাঈদ জড়িয়ে যান করোনার ভুয়া সনদ তৈরিতে। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। ২০২০ সালের ২৫ মে গ্রেপ্তার হন তিনি।
মামলাটির বিচার এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে ২০২১ সালে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে একটি ফার্মেসি ও চেম্বার বসিয়ে শুরু করেন চিকিৎসা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন