জ্বালানি তেলের দাম দেশে আবারো বাড়ছে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্যাসিবাদি সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবার জন্য আবারো আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গত পরশু শেখ হাসিনা নিজেও জ্বালানী ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার সবক দিয়েছিলেন।
অপরদিকে সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানি ব্যবহারের খরচ আরো ৫ শতাংশ বাড়ছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় নসরুল হামিদ বিপু জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাদের এই আহ্বানের মাধ্যমে দেশে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের চরম সঙ্কটের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
অডিও বার্তায় নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়েছেন। অথচ, করোনা মহামারির সময় যখন জ্বালানী তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে একেবারে তলানিতে ছিল তখন কিন্তু দেশে দাম কমানো হয়নি। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কথা বলছেন।
তিনি বলেন, আমরা ছয়-সাত মাস ধরে তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করছি। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারে কিনতাম, এখন তা ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সব সময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে আমরা তেলের প্রাইসটাকে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। আমাদের নিজস্ব অর্থে আমরা এই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমাদের মনে হয়, আমাদের একটা সময়ে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে (মূল্য সমন্বয়) যেতে হবে ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। তেলের মূল্য তারা সমন্বয় করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথাই যদি বলি, তারা বিভিন্ন তেলের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ার পর লোডশেডিং মোটামুটি বিদায় নিয়েছিল। শহরে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হতো না বললেই চলে। এখন সেই লোডশেডিং আবার ফিরেছে। রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক দিন দিনে কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
বিদ্যুতের বেহাল অবস্থার জন্য তিনি গ্যাস স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। অথচ, আইন তৈরি করে ইনডেমনিটি দিয়ে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়া করা হয়েছিল। এতে রাষ্ট্রের হাজারো কোটি টাকা লুটে নিয়েছে আওয়ামী ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেট। এখন গ্যাস স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখানো হচ্ছে। অথচ, গত এপ্রিল মাসেও বিদ্যুতে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে আত্ম তৃপ্তির ঘোষণা তাদের মুখেই শোনা গিয়েছিল।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন বলেন, আমাদের গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে। আমাদের যে নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। যে খনিগুলোর কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা খুব স্বল্প পরিমাণে। আমরা ১০ বছর আগে থেকে বলে আসছি যে ধীরে ধীরে গ্যাসের মজুত কিন্তু কমতে থাকবে।
তিনি বলেন, এখন থেকে কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন করতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
পরিস্থিতি দীর্ঘ হবার ইঙ্গিত দিলেন জ্বালানী উপদেষ্টা:
এদিকে, ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। এর মধ্যে সাশ্রয়ী পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিমান্ড ২০০০ মেগাওয়াট কমানোর প্রচেষ্টা চলবে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ভারত থেকে আমদানির বিদ্যুৎ আসবে। একই সময়ের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক রয়েছে। তবে ঘাটতির জন্য তিনি বৈশ্বিক জ্বালানী সংকটকে দায়ী করেন।
আমার দেশ
............................................................................
সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ছে .....................................................................................
সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানি ব্যবহারের খরচ আরো ৫ শতাংশ বাড়ছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
যদি ৫ শতাংশ বাড়ে তাহলে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ৭৬ পয়সা বেড়ে হবে ১৫ টাকা ৯৪ পয়সা। আর বাণিজ্যিক সংযোগে দাম হবে ৪৪ টাকা ২০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ওয়াসার ২৯৩ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান।
তারা বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
তারা আরো বলেন, এ বছর পানির দাম আর বাড়েনি। আইন অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ সমন্বয় করতে পারে। সেটাই করা হয়েছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব বিশেষ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করেছিল ওয়াসা। বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্য তাতে আপত্তি জানালে পরে ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। সে প্রস্তাবও তখন বোর্ডের অনুমোদন পায়নি।
গত বছরের ২৫ মে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় ঢাকা ওয়াসা। সে অনুযায়ী বর্তমানে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম পড়ছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগে এই দাম ৪২ টাকা।
দেশ রুপান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন