অভিজাত ক্লাবপাড়ায় তাদের নিয়ে বিতর্ক লেগেই থাকে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি খন্দকার আবদুর রশিদের পরিবারের সঙ্গে রয়েছে তাদের সখ্য। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাদের নানা ব্যাপারে অনুসন্ধানে নেমেছে। এরই মধ্যে নতুন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে দেশের অন্যতম ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের নিয়ে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির তিনজন মদ্যপ অবস্থায় নাচানাচি করছেন। তাদের সঙ্গে বেশ পরিচিত একজন গায়িকাও রয়েছেন।
কথিত আছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা ক্লাবপাড়া ছাড়াও বিভিন্ন সময় উঠতি বয়সী তরুণীদের সঙ্গে ফূর্তিতে মাতেন। সম্প্রতি এই ব্যবসায়ী পরিবারের দশজনের ব্যাংক হিসাব চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দারা। এরই মাঝে গোপন ওই ভিডিওটি নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তবে ভিডিওতে দেখা যাওয়া গায়িকার দাবি, তাকে গান গাইতে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা মদপান করছিলেন। কিন্তু তিনি এসবের সঙ্গে ছিলেন না।
ভিডিওর দৃশ্যতে দেখা গেছে, একটি ফ্ল্যাটে স্বল্প লাইটের আলোতে চারজন ব্যক্তি বসে আছেন। একজনের হাতে গ্লাস। পাশে টেবিলে রাখা আছে নামিদামি বিভিন্ন ব্রাণ্ডের মদের বোতল। যেখানে দেশের আলোচিত গায়িকা ইভা রহমান খালি কণ্ঠে গান করছেন। বসে থাকা চারজনের মধ্যে তিনজন একটি শিল্পগ্রুপের কর্ণধার। বাকি একজন তাদের কাজিন। ইভা রহমানের গানের তালে তারা ফূর্তিতে মাতোয়ারা।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সেখানে থাকা ব্যক্তিদের একজন ওই সংগীত শিল্পির সঙ্গে নাচতে দাঁড়ান। কিছু সময় পর তারা দুজন হাতে হাত রেখে নাচছেন। পাশে বসে বাকিরা সেগুলো বেশ আমোদ করে দেখছেন, আর হাসছেন। এরকিছু সময় পর আরেকজন (মোট দুইজন) ওই গায়িকার সঙ্গে নাচতে আসেন। এসময় তাদেরকে মাতাল মনে হয়েছে। কালো গেঞ্জি ও জিন্স পরা একজন অতিরিক্ত মদ্যপ থাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।
ভিডিওর আরেক দৃশ্যতে দেখা গেছে, ঢাকার একটি অভিজাত ক্লাবের প্রেসিডেন্ট (কালো প্যান্ট ও হলুদ রঙের টিশার্ট) ওই গায়িকাকে জড়িয়ে ধরেন। পাশে তার আরেক ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
আরেক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, একটি মিনি মদের বারে শিল্পগোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন ইভা রহমানের গান শুনছেন। সেখানে বেশ কয়েকজন নারীকে সিসা সেবন করতে দেখা যায়।
ইভার বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা:
গুলশান থানায় মানব পাচারের অভিযোগে কণ্ঠশিল্পী ইভা রহমানের বিরুদ্ধে গত মাসে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়েছে। ২৫ জুন পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। বর্তমানে সেটি তদন্তাধীন। মামলায় ইভাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ইভা রহমান পরস্পর যোগসাজশে পতিতালয় স্থাপন, পরিচালনা ও পতিতাবৃত্তিতে আহ্বান জানানোর জন্য নিজের ভবনের একটি ফ্ল্যাটে স্পা সেন্টার ভাড়া দেন।
কীভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক— জানতে চাইলে ইভা রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। এমনি কোনো আত্মীয় বা কাছের মানুষ এমন কিছু না। সম্প্রতি জন্মদিনের একটি পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি সেখানে গান গেয়েছি। তারা মদ খেয়েছে, ... আমি ওসবে ছিলাম না। এই ভিডিও কারা ভাইরাল করল জানি না। যারা করেছে, তারা আমাকে ব্লাকমেইল করতে চায়।’
খুনি রশিদের পরিবারের সঙ্গে সখ্য:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদের মেয়ে খন্দকার মেহনাজ রশিদের সঙ্গে চরম সখ্য রয়েছে শিল্পগ্রুপটির কর্ণধারদের। রশিদের গুলশানের বাড়িতে তাদের অহরহ আসা-যাওয়া ছিল। বিএনপি থেকে রাজধানীর একটি আসনে মনোনয়ন পাওয়া সেই শিল্পপতির পরিবারের সদস্যদের রহস্যময় আনাগোনা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আছে।
গতমাসে দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির পাঁচ ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঁচ বছরের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে এনবিআর। তাদের অ্যাকাউন্ট-সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র এবং বিনিয়োগ প্রকল্প সম্পর্কিত তথ্য দিতেও বলা হয়েছে।
দেশের অন্যতম এই শিল্পগ্রুপের অনেকে দেশের কয়েকটি অভিজাত সামাজিক ক্লাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এর আড়ালে তারা নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
এ ব্যাপারে জানতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং রাজধানীর একটি অভিজাত ক্লাবের প্রেসিডেন্টকে ফোন করা হলেও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন