ঈদ যাত্রায় বাসের সংখ্যা কম। এ জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আজ বৃহস্পতিবার সকালে
ঈদ যাত্রায় বাসের সংখ্যা কম। এ জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আজ বৃহস্পতিবার সকালেছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বলিয়াদিঘী গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান চাকরি করেন গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। কর্মস্থল থেকে ছুটি পাওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন তিনি। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যান। সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয় তখনো তিনি বাস পাননি।
আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোর পাঁচটা থেকে চন্দ্রা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছি না। যেগুলো আছে, তারা দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। তাই ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছি। ট্রাকে উঠে অল্প ভাড়ায় চলে যাবে বাড়িতে।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নলসন্ধ্যা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন কাজ করেন কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকার একটি ওষুধ কারখানায়। তিনিও বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, চন্দ্রা থেকে উল্লাপাড়া পর্যন্ত ভাড়া ২৫০ টাকা। কিন্তু ঈদের কারণে এ পথের জন্য ৫৫০ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র তিন দিন। এরই মধ্যে ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামে ছুটতে শুরু করেছে মানুষ। এতে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। বাসের জন্য চন্দ্রা ত্রিমোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চাপ বেশি থাকায় পরিবহনের চালক ও সহযোগীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। অন্যদিকে আগে হাজারো মানুষ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরলেও এবার নিষেধাজ্ঞার কারণে মহাসড়কে কোনো মোটরসাইকেল নেই।
গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় হয়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় ২৬টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। আজ দুপুরের পর গাজীপুরের আশপাশের এলাকার শিল্পকারখানাগুলো ছুটি হবে। যেসব কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে গেছে, সেসব কারখানার শ্রমিকেরা আজ সকাল থেকেই বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। এ কারণে সকাল থেকেই চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় জড়ো হন হাজারো ঘরমুখো মানুষ। কিন্তু পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানা ছুটি হওয়ায় সকালেই বাড়ি যাওয়ার জন্য চন্দ্রায় এসেছি। আগে বগুড়া যেতে ভাড়া লাগত ৪০০ টাকা। কিন্তু আজ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। দামাদামি করে ৮০০ টাকা ভাড়ায় এই বাসে উঠেছি।’
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর গ্রামের আসমা আক্তার বলেন, তাঁদের কারখানা ১০ দিনের ছুটি দিয়েছে। তাই পরিবারের চার সদস্য নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। আগে জনপ্রতি বাসভাড়া ৩৫০ টাকা নিত। আজ সেই ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ফারুক হোসেন বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের অভাব নেই। তবে ভালো মানের যানবাহনের অভাব। এসব যানবাহন ঈদের জন্য কোনোভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব গাড়িতে তেমন কেউ উঠে না। কিন্তু এখন ৫০০ টাকার কমে আসন পাওয়া যাচ্ছে না।
চন্দ্রা মোড়ে যাত্রী উঠনোর জন্য অপেক্ষমাণ একটি বাসের চালক ইউনুছ আলী বলেন, ঈদের সময় গাড়িতে যাত্রী ভরে নিয়ে গেলেও ঢাকার ফেরার সময় খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হয়। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দায়িত্বরত কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে যানজট নেই। তবে ভোর থেকে জনজট আছে। একসঙ্গে এত মানুষ বাড়ি যাওয়ার কারণে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ব্যাপক চাপ রয়েছে। এই সুযোগে কিছু বাসচালক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা থাকায় মহাসড়কে কোনো মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন