বন্যার প্রভাব পড়েছে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে। পশু থাকলেও নেই দাম। কমে গেছে ক্রেতার সংখ্যাও। অন্যদিকে বন্যা কাটিয়ে উঠলেও এখনো গোখাদ্য সংকট আছে জেলাজুড়ে।
অনেক চারণভূমি এখনো পানির নিচে। এ অবস্থায় পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এ কারণে পশু বিক্রি করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চাইছেন তারা।
দুই দফায় বন্যা হয়েছে কুড়িগ্রামে। এখনো অনেক চারণভূমি পানির নিচে রয়েছে। বন্যার কারণে জেলার সবগুলো নদ-নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের গবাদি পশু লালনে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এসব এলাকার মানুষ পশু বিক্রির চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে শুধু ঈদে বিক্রির জন্য অনেক খামারি পশু পালন করে থাকেন। সব মিলিয়ে জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে বিপুলসংখ্যক পশু আসছে। তবে এবার পশুর চাহিদা কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় এক হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় সব মিলিয়ে পশুর চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার। আর প্রান্তিক কৃষক থেকে খামারি পর্যায়ে প্রস্তুত আছে এক লাখ ৩৪ হাজার গবাদি পশু।
মঙ্গলবার সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও গবাদি পশু পালনকারী প্রান্তিক কৃষকরা। দেশি গরুতে বাজার ভরে গেছে। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। কোরবানির সম্মিলিত ও একক ক্রেতাসহ জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার এসেছেন। সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারদের সংখ্যা কম। তাই ক্রেতার সংকট থাকায় জমে উঠছে না ঐতিহ্যবাহী এই হাট।
একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু কম আসায় বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছিলেন তারা। কিন্তু বন্যার কারণে হাটে আমদানি অনেক বেশি থাকায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
ঝুনকার চর থেকে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার কারণে হাটে গরুর আমদানি এবার অনেক বেশি। দুটি গরু নিয়ে এসেছি। পাইকারও নাই, কেউ দামও বলছে না। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ওখানে এখনো সব মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গরুর খাদ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছি। ’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘বন্যার কারণে হাটে বিভিন্ন গবাদি পশুর আমদানি অনেক বেশি। আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। আর দাম গতবারের চেয়ে একটু কম মনে হচ্ছে। এই হাটে বেশির ভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে এসেছে। ’
যাত্রাপুর হাট ইজারাদার সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমাদের হাটে বিভিন্ন চর এলাকা থেকে অনেক গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই নেই। এবার হাট জমবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ’
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘হাট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ক্রেতার চেয়ে গবাদি পশুর আধিক্য। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার ও সাধারণ ক্রেতা এলে স্থানীয় বিক্রেতারা তাদের গবাদি সব পশু বিক্রি করতে পারবেন এবং লাভবান হবেন। এখনো সময় আছে, ঈদের হাট পুরোদমে জমে উঠবে আশা করি। ’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন