ওরা আর ফিরবে না। হারিয়ে গেছে চিরতরে। মা-বাবার ভালোবাসা ছিন্ন করে চলে গেছে অন্যলোকে। এ নিয়ে আফসোসের অন্ত নেই সিলেটে। ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিলো সদ্য কৈশোরে পা দেয়া তিন বন্ধুর জীবন। কাঁদছে ওদের পরিবার। বিলাপ করে কাঁদছেন ওদের মা-বাবা। তাদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠছে। অথচ ঈদের আগে এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে সিলেটে।
ঘাতক ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ওই তিন বন্ধু। এরা সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজিম, অমি ও জসিম।
এর মধ্যে অমি কয়েক মাস আগে ওই স্কুল থেকে টিসি নিয়ে শহরের আরেকটি স্কুলে ভর্তি হয়। তবে- তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে আগের মতোই। তিন বন্ধুর মধ্যে ফাহিম আহমদ অমি সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা সুবেদুর রহমান মুন্নার ছেলে। পিতার একমাত্র সন্তান। অনেক আদরের সে। মাসখানেক আগে মুন্না নিজের ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল কিনেন। ছেলের কারণে লুকিয়ে রাখতেন বাইকের চাবি। মুন্না বাড়ির বাইরে থাকায় ছেলে অমি ওই মোটরসাইকেল নিয়ে নগরীর মেজরটিলার শ্যামলী আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পথিমধ্যে মোটরসাইকেলে সঙ্গে নেয় তার বন্ধু পীরের বাজারের হাতুড়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে আজিম আহমদ ও খাদিমপাড়ার পুরানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জসিম আহমদ মাহিকে। বাইকে চড়ে তিন বন্ধু রওনা দেয় তামাবিল সড়ক দিয়ে। এই সড়কটি সিলেটের দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়ক।
পাথর বোঝাই ট্রাক চলে দিনে ও রাতে। ফলে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলো আজিম। আর অপর দু’জন ছিল পেছনে বসা। বাইক নিয়ে তারা হরিপুরের অদূরে গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি এলাকায় যাওয়ামাত্র সিলেটগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মোটরসাইকেলের। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আজিম। গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় অমি ও মাহি। শোকের ছায়া নেমে আসে সিলেটে। এমন দুর্ঘটনায় হতবাক হন সবাই। রাতে হাসপাতালে ছুটে যান স্বজনরা। কান্নার রোল পড়ে ওসমানী হাসপাতালে। জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ জানিয়েছেনÑ খবর পেয়ে তিনি পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। ঘটনা ঘটেছে বিকালে। ওই সময় হরিপুরের গ্যাসকূপ এলাকার সড়কে একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। ওই গাড়িটিকে ওভারটেক করছিল সিলেটগামী ট্রাক। আর বিপরীত দিক থেকে আসছিল মোটরসাইকেলটি। মারা যাওয়া তিনটি ছেলের মাথায় হেলমেট ছিল না। ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক ছেলে। আর হাসপাতালে দু’জন।
তিনি জানান, সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওঠানামা করা, হাইওয়েতে হালকা যানবাহন চলা, সতর্কতার অভাব থাকার কারণেই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে- রাতে হাসপাতাল মর্গে রাখা হয় তিন জনের লাশ। গতকাল সকালে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ জোহর টিলাগড়ের মাদানী মসজিদ এলাকায় জানাজা শেষে হযরত শাহপরান (রহ.) মাজারস্থ কবরস্থানে ফাহিম আহমদ অমির লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজার নামাজে হৃদয়বিদায়রক ঘটনার অবতারণা ঘটে। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের স্বজনরা। এ ছাড়া মাহি ও আজিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শহরতলীর পীরেরবাজারে। জানাজা শেষে লাশ স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন