নদীর পাঙ্গাশ অতি সুস্বাদু মাছ। আর দেশে খুব বেশি চাষ হওয়া মাছের মধ্যেও অন্যতম পাঙ্গাশ। চাষের পাঙ্গাশ মাছ দেশের জনগোষ্ঠীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মাছটির নষ্ট হওয়া ঠেকাতে এবং মাছে অনাগ্রহীদের আকৃষ্ট করতে বার্গার ও চাটনির মতো উপাদেয় খাদ্যপণ্য তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা।
চাহিদার তুলনায় পাঙ্গাশ মাছের সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। এতে মাছ চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিছু কারণে পাঙ্গাশ মাছ অনেকের কাছে খুব পছন্দের নয়। এ ছাড়া সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয় হাজার হাজার টন পাঙ্গাশ। এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে সবার কাছে মাছের পুষ্টি পৌঁছে দিতে এবং মাছ চাষিদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পাঙ্গাশের অব্যবহৃত অংশ থেকে ১১টি পণ্য তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক।
গবেষকদলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফাতেমা হক শিখা এবং আরেক অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন। গবেষণার সঙ্গে বিভাগের ১৪ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীও যুক্ত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকালে তৈরি করা পণ্যগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য তুলে ধরেন গবেষকদলের প্রধান ফাতেমা হক শিখা।
গবেষক অধ্যাপক ফাতেমা হক বলেন, পাঙ্গাশ থেকে তৈরি করা ১১টি পণ্য হলো ফিশ বার্গার, ফিশ আচার, ফিশ চাটনি, ফিশ কাটলেট, ফিশ সসেজ, ফিশ পাপড়, ফিশ ফ্লেক, ফিশ চিপস, ফিশ ম্যাকারনি-পাস্তা, ফিশ জেলাটিন ও ফিশ গ্লু। এসব মূল্য সংযোজিত পণ্যের প্যানেল টেস্টের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এসব পণ্য সংরক্ষণ করার পর খাদ্য উপযোগিতার বিষয়েও গবেষণা চালানো হয়।
গবেষক ইসমাইল বলেন, পণ্যগুলোর মধ্যে ফিশ বার্গারে ২০.৯৮, ফিশ আচারে ২২.৫০, ফিশ চাটনিতে ৬.৬৮, ফিশ কাটলেটে ১৮.৩৮, ফিশ সসেজে ১২.৫৪, ফিশ পাপড়ে ২৩.৯২, ফিশ ফ্লেকে ২৪.৫৬, ফিশ চিপসে ২৪.৮৭ এবং ফিশ ম্যাকারনি-পাস্তায় ২২.৭২ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে।
অধ্যাপক ফাতেমা হক আরো বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মাছ খেতে পছন্দ করে না। তাই মাছের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরির মাধ্যমে মাছের পুষ্টি তাদের কাছে পৌঁছানো আমাদের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে আমাদের তৈরি করা পণ্যগুলো শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। তারা সহজেই এসব পণ্য খেয়ে মাছের পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
পণ্যগুলোর সংরক্ষণ সম্পর্কে গবেষক ফাতেমা হক জানান, পণ্যগুলোর মধ্যে শুকনা খাবারগুলো বায়ুশূন্য পলিথিনের ব্যাগে ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। অন্যদিকে ভেজা খাবারগুলো ফ্রিজে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া ফিশ আচার এবং চাটনি প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন