সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে উৎসবে যোগ দিতে নোটিশ জারি করেছেন জেলা প্রশাসকরা
সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে উৎসবে যোগ দিতে নোটিশ জারি করেছেন জেলা প্রশাসকরা
বিশেষ প্রতিনিধি
দেশের বিভিন্ন জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অন্তহীন দুর্দশায় রয়েছেন মানুষ। ঠিক এই সময়ে পদ্মা সেতু উৎসবে হতে যাচ্ছে ২৫ জুন (শনিবার)। দেশের মানুষকে বন্যায় ভাসমান রেখে সরকার উৎসবে মেতে উঠেছে। সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে উৎসবে যোগ দিতে নোটিশ জারি করেছেন জেলা প্রশাসকরা। প্রতিটি জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সরকারি ছুটির দিনে (শনিবার) উৎসবে যোগ দিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এমনকি জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার বহির্ভূত দুদকের জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদেরও নোটিশ করেছেন জেলা প্রশাসক। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইস্যু করা একটি চিঠি আমার দেশ-এর হাতে এসেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২৫ জুন সকাল ৯টায় রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান চত্ত্বরে আনন্দ ফুর্তিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই চত্বর থেকে আনন্দ র্যালি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হবে। এই র্যালিতে জেলার প্রতিটি অফিস আদালতের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
শুধু রাজশাহী নয়, দেশের প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ওই জেলায় সকল অফিস-আদালতে অনুরূপ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন বিভিন্ন জেলায় তাদের অফিসেও জেলা প্রশাসনের অনুরূপ চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরকম চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদনের দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সকল ক্লাস শনিবার (২৫ জুন) বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ, বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি কমন ফেইসবুক পেইজ রয়েছে বুয়েটিয়ান নামে। এই পেইজে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এধরনের কোন অনুরোধ কারো কাছে করেননি। কোন দাবী কতৃপক্ষের কাছে করতে হলে, বিভিন্ন বিভাগ এবং হলের ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে করা হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এই নিয়ম চালু আছে। কিন্তু শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের অনুরোধ ছাত্র প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয় বুয়েটিয়ান নামক পেইজে।
দেশের মানুষকে বন্যায় ভাসমান রেখে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দ উৎসবে যোগ দিতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও বাধ্য করছেন বলে জানা গেছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয়েছে তাদের নির্ধারিত জায়গায় উপস্থিত হওয়ার জন্য।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে ভারত থেকে গায়ক-গায়িকা আনা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ দুই থেকে তিন টাকা । অথচ ভারতীয় শিল্পীকে দেওয়া হবে কোটি টাকার উপরে।
দুর্নীতির ইতিহাস গড়ে তৈরি করা হয়েছে পদ্মা সেতু। এখন দেশের সরকারি চাকুরীজীবী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করা হচ্ছে আনন্দ ফুর্তিতে যোগ দিতে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন