ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবসটি অতি নীরবেই কেটে গেল। মরণবাঁধ ফারাক্কা নিয়ে এখন আর কেউ কথা বলতেও যেন রাজি নয়। ভারতের আগ্রাসন এতটাই জেঁকে বসেছে যে, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু গুলো নিয়ে রাজনীতিকদের এখন আর খুব একটা কথা বলতে শোনা যায় না। যেমন, ১৬ মে ছিল জাতীয় ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে শুরু হয়েছিল এই লংমার্চ। ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন নদী পদ্মার উজানে ফারাক্কা নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। যার অবস্থান বাংলাদেশ থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে।
১৯৭৪ সালে এই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত। ভারতের ভূখণ্ডে গঙ্গা নদীর ওপরে নির্মিত এই বাঁধ চালু করা হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল। ফারাক্কা বাঁধ চালুর ফলে বাংলাদেশে পদ্মানদী অববাহিকায় পরিবেশে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ে। যার খেসারত দিতে হয় পুরো দেশবাসীকে। জাতীয় পরিবেশে বিপর্যয়ের ফলে আজকের শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার কথা ভেবেই।
১৯৭৬ সালের ১৬ মে লংমার্চের ডাক দিয়েছিলেন মজলুম জননেতা হিসাবে খ্যাত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। রাজশাহী শহরের মাদ্রাসা ময়দান থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখী লংমার্চ ১৬ মে শুরু হলেও শেষ হয়েছিল ১৭ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে। লংমার্চের পর ৪৬ বছর পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে পদ্মানদীকে ঘিরে পরিবেশের অনেক বিপর্যয় ঘটেছে। এই বাঁধ নির্বিঘ্নে চালু করতে পেরে ভারত অভিন্ন ৫৪টি নদীর সব গুলোর উজানে পানি প্রবাহে আটকে দিয়েছে। তিস্তার উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধের ফলে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। একে একে সব গুলো নদীর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টির কারণে গ্রীষ্মে শুকনা মওসুমে বাংলাদেশের সব গুলো নদী শুকিয়ে যায়। বর্ষা মওসুমে ভারত তাদের সুবিধা অনুযায়ী বাঁধ খুলে দেয়। এতে দেশের অনেক অঞ্চল অতিরিক্ত পানির চাপে বন্যার শিকার হয়। এতে বাংলাদেশকে কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়।
বর্ষা মওসুমে মাস তিনেকের জন্য নদীতে পানি থাকলেও বছরের নয় মাসজুড়েই পানি প্রবাহ তেমন থাকে না। শীর্ণ খালের রূপ এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মাসহ দেশের নদী গুলো। যেমন, ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা মরে যাবার সাথে সাথে শাখা নদী গুলো মরে গেছে। পদ্মার শাখা নদী হিসাবে পরিচিত-বড়াল, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়া সাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবতসহ পঁচিশটি নদ-নদীর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। তেমনিভাবে অন্যান্য নদীর পানি প্রবাহে ভারত বাঁধা সৃষ্টি করায় সেই নদী গুলোর শাখা নদীও অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন