জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রতিটি কক্ষে বিনামূল্যে একটি করে তালা দিয়েছে হল প্রশাসন। তবে এ তালার চাবি নিতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি কক্ষে আটজন ছাত্রী থাকছেন। ফলে বিনামূল্যের তালা উপহার পেয়ে চাবি বাবদ কক্ষপ্রতি শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। অথচ বাজারে ৮টি চাবি সংযুক্ত একটি তালার দাম ৩৫০ টাকা। ফলে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তালা-চাবি বাবদ আদায় করছে দ্বিগুণ টাকা। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন আবাসিক হলের ছাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জবির একমাত্র ছাত্রী হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল। ১৬তলা বিশিষ্ট এ ভবনে ১৫৬টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে আটজন করে শিক্ষার্থীর জন্য থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। হলের প্রতিটি কক্ষে একটি করে তালা ফ্রি দিচ্ছে প্রশাসন। তবে এ তালার চাবি নিতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা।
হল কর্তৃপক্ষ যে তালা ফ্রিতে দিচ্ছেন, সেই আলিফ প্রিমিয়ারের একটি তালার দাম আটটি চাবিসহ ৩৫০ টাকা। ১২টি চাবিসহ একই তালার দাম ৪২০ টাকা। অথচ হল প্রশাসন আটটি চাবি বিক্রি করছে ৮০০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করে হলের একজন আবাসিক ছাত্রী বলেন, ‘বলা হচ্ছে, তালা ফ্রি। শুধু চাবি নিতে ১০০ টাকা দিতে হবে। রুমে আটজন থাকছি। আটজনকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা করে ৮০০ টাকা। অথচ বাজারে এ তালার দাম অনেক কম। তালা ফ্রি দেওয়ার কথাটা অদ্ভূত। এটা প্রশাসনের বাটপারি। শিক্ষার্থীদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বলে উল্টো হল প্রশাসন তালা-চাবির ব্যবসা করছে।’
ক্ষোভ জানিয়ে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি চাবি বানাতে বাইরের মিস্ত্রিরা ৩০-৪০ টাকা নেয়। সেখানে হল কর্তৃপক্ষ একটি চাবি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিচ্ছে।’
হল প্রশাসনের এ চাবি বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলছেন ছাত্রলীগের নেত্রীরাও। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিনিয়া আফ্রিন বলেন, ‘তালা-চাবির দাম তো এত টাকা না। হল কর্তৃপক্ষ বলছে তালা ফ্রি। তালার সঙ্গে তো চাবি এমনিতেই থাকে। তাহলে টাকা কেন দিতে হবে?’
তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসনের এত টাকা নেওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ বিষয়ে আমি হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলবো। এছাড়া ক্যান্টিন পরিষ্কার করা, হলে মেয়েদের রান্নার জন্য গ্যাস চালুর বিষয়েও কথা বলবো। মেয়েদের সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
হলের আবাসিক শিক্ষক ড. শরাবান তোহুরা বলেন, ‘তালা-চাবি কেনা ও বণ্টনের জন্য কমিটি আছে। কমিটির আহ্বায়ক আবাসিক শিক্ষক প্রতিভা রানী কর্মকার ম্যাম। আমি এ কমিটিতে ছিলাম না। তালা-চাবি কীভাবে বণ্টন করা হচ্ছে, কত টাকা নেওয়া হচ্ছে তা কিছুই জানি না।’
হলের আবাসিক শিক্ষক ও তালা-চাবি বণ্টন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. প্রতিভা রানী কর্মকারকে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামীমা বেগমের সঙ্গেও মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন