এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইফাজ আহমেদ চৌধুরী। রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবার। কোনো খোঁজ দিতে পারছে না তারা। বরং তাঁকে খুঁজে বের করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলোর যেন কোন গরজই নেই।
এতে প্রমান করে, আমেরিকা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও থামছে না গুম। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ধরে নিয়ে গুম করা অব্যাহত রেখেছে। প্রশ্ন উঠেছে জনগণের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় বেতনভুক্ত বাহিনীর কাজ কি? মানুষ ধরে নিয়ে গুম করাই কি তাদের দায়িত্ব? নাকি নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা তাদের দায়িত্ব? এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মানুষের মাঝে।
স্বজনরা জানান, চলতি বছরের ১১ই এপ্রিলের ঘটনা। মিরপুর-২ বসতি হাউজিং বড়বাগের ৭ নম্বর বাসা থেকে জোহরের নামাজ পড়তে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার হদিস নেই তাঁর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকেও পরিবার তেমন সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বরং থানায় যোগাযোগ করলে পরিবারকে বলা হচ্ছে নিজ থেকেই আত্মগোপনে থাকতে পারে ইফাজ।
নিখোঁজ ইফাজের সন্ধানে তার পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কোনো সুরাহা না পেয়ে মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। ছেলের সন্ধান চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছেন ইফাজের মা।
কিন্তু, কোন আবেদন নিবেদনই গুরুত্ব পাচ্ছে না। দীর্ঘ এক মাস পেরিয়ে গেলেও খোঁজ দিতে পারেনি রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থা।
পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় মসজিদের আশপাশের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেছে।
সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ইফাজ নামাজ শেষ করে মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে দিয়ে একটি পশু হাসপাতালে গিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে ফিরে আসেন। এ সময় সেখানে একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস ঘুরেফিরে ইফাজকে দীর্ঘক্ষণ ধরে অনুসরণ করতে দেখা যায়। এরপর কী ঘটেছে ইফাজের ভাগ্যে তা আর ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে না বলে পরিবারকে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবারের দাবি, তাকে কালো গাড়িটিতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ আগে একইভাবে নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন বসতি হাউজিং এলাকায় বসবাসরত বেসরকারি চাকরিজীবী নাইম।
নিখোঁজ শিক্ষার্থী ইফাজের মা জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। গত দুই যুগে ছেলেকে এক মুহূর্তের জন্য কাছ ছাড়া করিনি। অথচ এই প্রথমবার ছেলেকে ছাড়া আমাদের ঈদ পালন করতে হয়েছে। ইফাজকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। যেভাবেই হোক আমার ছেলের সন্ধান চাই।
তিনি বলেন, ইফাজ কোনো অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হউক। নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা দপ্তর, র্যাব সর্বত্র আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত তার সন্ধান দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ বলছেন আমার ছেলে নিজ থেকেই আত্মগোপনে আছে। সে কি কারণে আত্মগোপনে যাবে? তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ চাইলে মোবাইল ফোনের কললিস্ট এবং সর্বশেষ অবস্থান পর্যালোচনা করলে হয়তো তাকে ফিরে পাওয়া যেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, সে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নেই। যত দ্রুত সম্ভব আমরা ইফাজকে সুস্থভাবে ফেরত পেতে চাই।
ইফাজের বাবা কাজী মমিন উদ্দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে ইফাজ বড়। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় তার পরিবার সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। তাকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেছে, না কি তিনি নিজ থেকেই আত্মগোপনে আছেন বিষয়টি তদন্তাধীন।
উল্লেখ্য, ৮ মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন ইফাজ। তার স্ত্রী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন