এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার ফসফেট, পটাশ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে বেশি দামে। শ্রমিকের মজুরিও ছিল বেশি। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে সাড়ে পাঁচ টাকা থেকে ছয় টাকা। সেই আলু এখন বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের দামেই।
এই চিত্র বগুড়া জেলার। জেলার পাইকারি বাজারে এ সময়ে আলুর ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দামও তলানিতে এসে ঠেকেছে। দাম না মেলায় বহু কৃষক ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন না। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে কত দিন এমন মন্দা থাকবে, সে বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ এবং কৃষি বিপণন দপ্তরের কর্মকর্তারাও স্পষ্ট কিছু জানাতে পারছেন না। এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।
গত বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে সাদা আলুর দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে আসে। মহাস্থান পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই আলু সাত থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। এই আলু বর্তমানে মাঠে কৃষক পাচ্ছে সর্বোচ্চ ছয় টাকা। এই সময়ে মূলত পাকড়ি জাতের আলুর ফলন হয়। বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে এই আলু বিক্রি হয়েছে। যদিও এই মৌসুমে এক কেজি পাকড়ি জাতের আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় আট টাকা। আলুর মোকাম হিসেবে পরিচিত বগুড়ায়ই আলুর এমন দামে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাটে সাদা গ্র্যানুলা প্রতি মণ আলুর দর ছিল ২২০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা, অ্যাস্ট্রারিক বা স্টিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও ক্যারেট জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং লাল পাকড়ি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মণ দরে।
মহাস্থান হাটে আলু নিয়ে আসা আব্দুল গফুর নামের একজন বলেন, সারা দিন বসে থেকেও ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছি না। এখন হাটেও দাম নেই, মাঠেও দাম নেই।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া দেশের শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর একটি। কয়েক মৌসুম ধরে এই জেলায় আলু আবাদ ও উৎপাদন ভালো হওয়ার কারণে আলুর দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। গত মৌসুমে জেলায় আলুর ফলন হয়েছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ হাজার মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার উৎপাদিত উন্নতমানের আলু জেলা ও দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। প্রায় এক যুগ ধরে এ জেলার আলু রপ্তানি হচ্ছে এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ উপজেলা, ঘোড়াধাপ, নামুজা ও চাঁদমুহা এলাকার কয়েকজন আলু চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে প্রচুর আলু উঠলেও শীত বাড়ার কারণে বাইরের পাইকাররা হাটে আসছেন না। এতেই আলুর দরপতন ঘটেছে।
মহাস্থান হাটের শাহ সুলতান সবজি আড়তের স্বত্বাধিকারী বাবু মিয়া বলেন, এখনো বেশ কিছু হিমাগারে পুরনো আলু মজুদ আছে। সেই আলুগুলো ২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। কিছু ব্যাপারী লাভের আশায় সেসব আলু ধুয়ে বাইরের জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জে মজুদ আলু তিন টাকা কেজি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নতুন আলু বাজারে উঠলেও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হিমাগারে প্রচুর পুরাতন আলু মজুদ রয়েছে। উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের শরিফ কোল্ডস্টোরে গিয়ে দেখা যায়, হিমাগারে থাকা ৫০ কেজি বস্তার আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে মাত্র তিন টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন