আজ জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত দু'বছর ধরে জেলা প্রশাসকরাই হয়ে উঠেছিলেন জেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। জনপ্রতিনিধিদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে জেলা প্রশাসকরাই নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছিলেন জেলাগুলোতে। কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী তার নীতি নির্ধারণী বক্তব্যে বলেছেন যে, জেলা প্রশাসকদেরকে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতা খর্ব শুরু হল কিনা সে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে। গতকালই একজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন যে এমপিদের কোন ক্ষমতা নেই, এমনকি সচিবালয়ের পিয়ন পর্যন্ত তাদেরকে পাত্তা দেয় না। তার এই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য একটি নতুন আবহ তৈরি করল বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে নির্বাচনের যখন মাত্র দু'বছর বাকি সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেল। বাংলাদেশে করোনা প্রকোপ শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে। তখন থেকেই সরকার আমলাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। জেলার দায়িত্বে জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় এবং এমপিদের ভূমিকা হয়ে পড়ে গৌণ।
একই সময় প্রতিটি জেলায় সমন্বয়ের জন্য সচিবদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ৬৪ জন সচিবকে ৬৪টি জেলার দায়িত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা চূড়ান্ত হবে খর্ব করা হয়। এর ফলে জেলা প্রশাসকরা আর জনপ্রতিনিধিদের পাত্তাই দিতেন না বরং তারা বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য সচিবদের সাথেই পরামর্শ করতেন। ফলে একটি জেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ভূমিকা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার গুলো জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে বণ্টনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। গত দুই বছর ধরে এ রকম অবস্থায় চলার কারণে সচিব ও জেলা প্রশাসকদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন এমপিরা। শুধুমাত্র জেলা প্রশাসক নয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের নাকে ছড়ি ঘোরানো শুরু করেন। এ সময় ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আনসার দেওয়া হয়। এই আনসার দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন জনপ্রতিনিধিরা। জাতীয় সংসদে তোফায়েল আহমেদ এর মত হেভিওয়েট এমপিরা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং সারাদেশে আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে আলোচনা একাধিক সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন। এরকম পরিস্থিতিতে সামনের নির্বাচনে এমপিরা জনগণের কাছে কিভাবে যাবেন সেই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনের তখনই প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের এই সিদ্ধান্ত নিলেন। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরা হলো বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সামনে নির্বাচনে যেনো জনপ্রতিনিধিদের দৃশ্যমান ভূমিকা থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। কারণ জনপ্রতিনিধিদের দৃশ্যমান ক্ষমতা যদি না দেখা হয় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা যদি সুস্পষ্ট না হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে কিভাবে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে ভোট চাইবেন এটি একটি বড় প্রশ্ন।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে প্রশাসনের সাথে জনপ্রতিনিধিদের একটি সমন্বয় প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, জেলা প্রশাসকদের জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজের কথা যেটি বলা হয়েছে সেটি একটি রুটিন বক্তব্য। জেলা প্রশাসকরা এখনো সরকারের মাঠ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী জায়গায় রয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে যে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তারাই আগামী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। সেই বিবেচনা থেকে এখনই যদি জেলা প্রশাসকদের সাথে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় না করা হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে জনপ্রতিনিধির কাজ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মাঠে কতটুকু বাস্তবায়িত হয় সেটি বোঝা যাবে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন শেষ হওয়ার পর তারা যখন এলাকায় ফিরে যাবে তখন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন