চালক কিংবা যাত্রী নয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সড়কে বেশি প্রাণ গেছে ফুটপাতে থাকা পথচারীর। গতকাল রোববার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১১৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পথচারী ৬২ জন, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ৩৩ জন এবং অন্যান্য যানবাহনের (বাস, রেকার, প্যাডেল রিকশা, প্যাডেল ভ্যান, অটোভ্যান, ঠ্যালাগাড়ি ইত্যাদি) যাত্রী ও আরোহী ২৪ জন। এসব দুর্ঘটনার ২৩ টি ভোরে, ২১ টি সকালে, ১১ টি দুপুরে, সময় বিশ্লেষণে (২০ দশমিক ১৭ শতাংশ), বিকেলে ১৬টি, সন্ধ্যায় ৪টি ও রাতে ৩৯টি সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব দুর্ঘটনায় ১৭২টি যানবাহন সম্পৃক্ত। সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবসহ ১২ কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সেগুলো হলো- অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপ্রতুল সড়ক; একই সড়কে অযান্ত্রিক-যান্ত্রিক, স্বল্প ও দ্রুতগতির যানবাহনের চলাচল এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব; যথাস্থানে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস না থাকা। থাকলেও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী না থাকা এবং ফুটপাত হকারদের দখলে থাকা; রাজধানীর যাত্রীবাহী বাস টার্গেটভিত্তিক চালানোর ফলে চালক-শ্রমিকরা পথে পথে যাত্রী উঠানোর জন্য বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় অবতীর্ন হয়। এতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ নির্দিষ্ট স্থানে বাস স্টপেজ না থাকা; ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে বাইপাস না থাকার ফলে রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীর ভেতরে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। এই সময়টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে; রাজধানীতে অধিক পরিমানে মোটরসাইকেলের চলাচল; দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকার পর ট্রাফিক সিগনাল ছাড়লে সব ধরনের যানবাহন একযোগে বেপরোয়া গতিতে ছোটা; অসহনীয় যানজটের কারণে সড়ক ব্যবহারকারীদের আচরণে অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতা তৈরি হওয়া; গণপরিবহন মানসম্মত ও সহজলভ্য না হওয়ার কারণে রিকশার ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলকারী সড়কে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ; ফ্লাইওভারগুলোতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকার জনসংখ্যা কমানো, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, গণপরিবহনে খাতের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করাসহ ৮ টি সুপারিশ দেওয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।
সেগুলো হলো- প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে হবে; ঢাকার খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খুলতে হবে; জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে কর্মজীবী মানুষের ঢাকামুখী স্রোত থামাতে হবে; সামর্থ্য বিবেচনা করে রাজধানীতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য পৃথক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে হবে; প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করতে হবে। এই লেনে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত যানবাহন চলতে পারবে না; ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে; গণপরিবহনে খাতের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে; “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে;
প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, গণপরিবহনের নৈরাজ্য এবং যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকা বর্তমানে বসবাস অনুপোযোগী শহরের তালিকায়। এখানে পিকআওয়ারে যানবাহনের গড় গতিবেগ ৫ কিলোমিটার।
গবেষণা বলছে, রাজধানীতে যানজটে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যার বাৎসরিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর সড়কের ৭০ শতাংশ দখল করে চলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা। ৩০ শতাংশেরও কম জায়গায় চলে গণপরিবহন। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রী বহন করে। আর গণপরিবহন বহন করে ৪৯ শতাংশ যাত্রী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন