‘লাল দালান’ ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল প্রায় ২০ বছর আগে। তখন প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে মানুষ। ভবনটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এত বছর পরে এসে সেই দাবি বাস্তবায়নের পথ খুলেছে। ভবনটি প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি পরির পাহাড়ে নতুন ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে যখন বিরোধে জড়িয়েছে, তখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভবনটি সংরক্ষণের প্রস্তাব দিল। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘অনুশাসন’ দিয়েছেন যে পরির পাহাড়ে আর কোনো নতুন স্থাপনা হবে না।
পরির পাহাড়ের ‘লাল দালান’ হিসেবে পরিচিত সেই দৃষ্টিনন্দন ভবন প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হলে জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়সহ পরির পাহাড়ে থাকা সরকারি দপ্তরগুলো যাবে কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে ‘সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে পরির পাহাড়ে থাকা দপ্তরগুলো স্থানান্তর করা হবে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায়। নতুন করে যে সমন্বিত অফিস ভবন নির্মিত হবে, সেখানে চলে যাবে বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৪৪টি সরকারি দপ্তর। তিনি জানালেন, কর্ণফুলীর তীরে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পাশে চান্দগাঁও সার্কেলের অধীনে থাকা প্রায় ৭৩ একর খাসজমি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে খসড়া পরিকল্পনা হয়েছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নকশা চূড়ান্ত হতে পারে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সরকারি দপ্তরগুলো সেখানে চলে যাবে। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধ, সরকারি কর্মচারীদের জন্য হাসপাতাল, সার্কিট হাউস ও সরকারি ট্রেনিং সেন্টারসহ নানা সুবিধা থাকবে সেখানে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরগুলো পরির পাহাড় থেকে স্থানান্তর হলেই লাল দালানকে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের একটি প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে। কমিটির সদস্যরা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পরির পাহাড় এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে মতামত জানাবেন। এসংক্রান্ত একটি চিঠি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে এসে পৌঁছেছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে জানা গেছে, পরির পাহাড়কে (কোর্ট বিল্ডিং) সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুজ্জামানকে। কমিটির সদস্য আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান ও সদস্যসচিব সহকারী স্থপতি মাহফুজ আলম।
জেলা প্রশাসক আশা প্রকাশ করছেন, বাংলাদেশের যে সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে, সেই আলোকে প্রত্নতত্ত্ব আইনে পরির পাহাড়ের লাল দালান হেরিটেজ ঘোষিত হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে। তবে সরকারি দপ্তর এখান থেকে সরে গেলে ভবনটি হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ হবে কি না সেটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যমান আদালত ভবনের কার্যক্রম যথারীতি বহাল থাকবে। শুধু লাল দালান প্রত্নতত্ত্ব ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নানা ধরনের কারুকার্য, ছাদে দুটি গম্বুজ, ভবনের কিছু অংশ ইংরেজি ‘টি’ এবং বাকি কিছু অংশ ‘ডাব্লিউ’ আকৃতির। দোতলা ভবনটির কিছু অংশ ত্রিতল। এর কক্ষগুলোর পরিসর বেশ বড়। এই ভবনের সঙ্গে মিশে আছে স্বদেশি আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, চট্টগ্রামের যুববিদ্রোহের স্মৃতি। আর সংরক্ষিত আছে ঐতিহাসিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন