ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বগুড়ার শেরপুরে গরিবদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ভিজিএফের চাল আজও বিতরণ করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরধরে চার হাজার কেজি দুস্থদের এসব চাল পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের গোডাউনে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে। ঈদের পর ১৪দিন পার হলেও গরিবদের এসব চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ এসব চাল বিতরণ করা হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। ফলে গোডাউনে পড়ে থাকা দুস্থদের ভিজিএফের চাল খাচ্ছে ইঁদুর আর পোকা। অথচ সংশ্লিষ্টদের সেদিকে কোনো নজর নেই।
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের মেম্বার (ইউপি সদস্য) মাহমুদুল হাসান লিটনসহ একাধিক মেম্বার বলেন, যে গোডাউনে চালগুলো রাখা হয়েছে সেটি একটি পরিত্যক্ত গোডাউন। তাই ওই গোডাউনটি এখন ইঁদুর আর পোকার বসতঘর। আর সেখানেই ভিজিএফের চালগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫ দিন তালাবদ্ধ ওই ঘরটি খোলা হয় না। এ অবস্থায় আরো কিছুদিন থাকলে গরিবের চালগুলো ইঁদুর আর পোকায় খেয়ে ফেলবে। ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি ও বিতরণ দেখিয়ে ওইসব ভিজিএফর চালগুলো লোপাটের পাঁয়তারা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে অতি দরিদ্রের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৪ হাজার ৯৮০টি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শাহবন্দেগী ইউনিয়নে দুই হাজার ৪৯৮ পরিবারের অনুকূলে ২৪ দশমিক ৯৮০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই চাল বিতরণের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরোধ তৈরি হয়। এতে করে বরাদ্দ পাওয়া ভিজিএফের চাল সম্পূর্ণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চার হাজার কেজি চাল পরিষদের গোডাউনেই পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহবন্দেগী ইউনিয়নের একাধিক মেম্বার (সদস্য) অভিযোগ করে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এই ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। একই ব্যক্তির নিকট থেকে একাধিক স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে চাল উত্তোলন দেখিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল আমিন মন্ডল বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ভিজিএফের ৭০০ কার্ড দাবি করে বসেন। তবে তাদের ৪০০ কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু দুস্থদের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণ করা হয়নি। তাই কেউ চাল নিতে আসেননি। এই কারণে ওইসব কার্ডের চাল পরিষদের গোডাউনেই পড়ে আছে।
চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, বিগত সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের যেসব কার্ড দেওয়া হয়েছিল তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এবারও সেই কাজই করা হয়। তাই কার্ড পাওয়া দুস্থ ব্যক্তিদের না এনে দু-একজন নেতা তাদের ভাগের ভিজিএফের সব চাল নিতে এলেও তাদের দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে চাল না পেয়ে বাধার সৃষ্টি করেন তারা। পরবর্তীতে তাদের কার্ডের চালগুলো রেখে বাকি চাল গরিব মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এই চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
শাহবন্দেগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভিজিএফের চাল বিতরণে চেয়ারম্যান নিজেই নয়-ছয় করেছেন। মাস্টাররোল ভুয়া নাম তালিকা করে এই চাল বিতরণ দেখিয়েছেন। আমরা কেবল চেয়ারম্যানের ওইসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছি মাত্র। এছাড়া দলীয়ভাগ হিসেবে তাদেরকে কোনো ভিজিএফের কার্ডই দেওয়া হয়নি। তাই কার্ড বিতরণ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ইউনিয়নের সচিব ইকবাল হোসেন দুলাল বলেন, সামান্য জটিলতার কারণে চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই পরিষদের বৈঠক ডেকে বিষয়টি সমাধানের পাশাপাশি ওইসব চাল বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দ্রুত চালগুলো বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে মিটিং ডাকতে বলা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে চালগুলো বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঈদের দুদিন আগে ভিজিএফের চালগুলো বিতরণ শুরু করা হয়। কিন্তু সেখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে চাল বিতরণে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে যাই। পাশাপাশি সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে চাল বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন